বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৫ আশ্বিন ১৪৩২

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ১১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪৭, ১১ জুলাই ২০২৫

এনসিপির জন্য দরজা খোলা কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়: সালাহউদ্দিন

এনসিপির জন্য দরজা খোলা কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়: সালাহউদ্দিন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এবার নির্বাচনি জোট গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত।

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে সব দাবি ও অবস্থান নিচ্ছে, তা বৃহত্তর কৌশলের অংশ। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার দ্রুত সমাপ্তি চেয়ে তিনি সতর্ক করেন, অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সালাহউদ্দিন বলেন, অতীতে কৌশলগত কারণে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি জোট করেছিল, কিন্তু বর্তমানে এমন কোনো প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না। তার ভাষায়, এখন বিএনপি মূলত সেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন ও জাতীয় সরকার গড়ার দিকে মনোযোগী, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

এনসিপির সঙ্গে সম্ভাব্য জোট প্রসঙ্গে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আলোচনা চলবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সময়ই নির্ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, সব গণতান্ত্রিক দলই নির্বাচনের আগে নিজ নিজ কৌশল গ্রহণ করবে, এবং বিএনপি কী কৌশল নেয় ও কার সঙ্গে জোট করে, সেটিও সময়মতো জানা যাবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সালাহউদ্দিন মনে করেন, এই প্রক্রিয়া অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে এ আলোচনা শেষ হওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করছে। দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাগিদ দেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন এবং আশা প্রকাশ করেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনের পক্ষে রায় দেবে। তিনি বলেন, জনগণ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। তবে এই কাঠামোর রূপ এবং উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকায় বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যদি বিকল্প নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তবে বর্তমান কাঠামোই বহাল থাকবে।

প্রস্তাবিত অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা সম্পর্কে সালাহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এই ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত নয়। তার মতে, পিআর ব্যবস্থায় ভোটাররা সরাসরি তাদের প্রতিনিধি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, ভোটদানে নিরুৎসাহিত হন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভোটাররা স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পছন্দ করেন, কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় এমনও হতে পারে যে, এক এলাকায় ভোট বেশি পাওয়ার পরও অন্য এলাকার কাউকে নির্বাচিত করা হয়, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।

তিনি আরও বলেন, যেসব দেশে পিআর ব্যবস্থা কার্যকর, সেখানে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশে এমপিরা সরাসরি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় পিআর এখানে অকার্যকর হবে। তিনি পিআর ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় হিসেবে অভিহিত করেন, কারণ এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের সুযোগ হারান এবং ছোট দলগুলো কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পেতে পারে, যা দুর্বল জোট সরকার গঠনের ঝুঁকি তৈরি করে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা বলেন, পিআর ব্যবস্থার নির্বাচন বিএনপি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবে না। তার ভাষায়, কিছু দল বিচার ছাড়া নির্বাচন না করার কথা বলছে, কেউ সংস্কার চায়, কেউ পিআর প্রস্তাব দিচ্ছে—এসবই বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। তবে তিনি আশাবাদী যে সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপি সম্মান জানায় এবং তাদের জন্য শুভকামনা রাখে, তবে প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন জনসমর্থন থেকেই আসে। তার মতে, ছোট দলগুলো বড় বড় দাবি তুললেও তারা খুব অল্পসংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এবং রাজনীতিতে জনমতের মূল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আসলে দর-কষাকষির কৌশলেরই অংশ, যেমন আসন ভাগাভাগি।

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, দলটি আর রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং একটি অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়া চরিত্রে পরিণত হয়েছে। তার মতে, ১৯৭৫ সালের আগ থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ইতিহাসে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই।
 

সর্বশেষ