সরু সংযোগ সড়কে ভাসানী সেতুর সুফল ব্যাহত, বাড়ছে যানজট-দুর্ঘটনা ও জনভোগান্তি
উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চালু হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। কিন্তু সেতুর দুই প্রান্তে পুরনো সরু সংযোগ সড়ক ঠিক না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। বরং প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনার ঝুঁকি আর জনভোগান্তি বেড়ে চলেছে।
তিস্তা নদীর ওপর চিলমারী-হরিপুর সংযোগস্থলে নির্মিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি চলতি বছরের ২০ আগস্ট উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
কুড়িগ্রাম–গাইবান্ধা জেলার মানুষের যুগান্তকারী যোগাযোগ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই সেতু নির্মাণ। এতে কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের মানুষের ঢাকা–বগুড়ার পথে অন্তত ৫৫ কিলোমিটার পথ ও দুই ঘণ্টা সময় কমার কথা।
কিন্তু সেতুকে ঘিরে মোট ৫৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৮.৩ কিলোমিটার নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়েছে। অপরদিকে বাকি প্রায় ৫০ কিলোমিটার পুরনো সংকীর্ণ রাস্তা আগের অবস্থায় রয়েছে। ফলে সেতুর প্রবেশমুখে যানবাহন নামতেই পড়ছে ভোগান্তিতে।
উলিপুর, দূগারপুর, দারিয়াপুর ও ধর্মপুর বাজার এলাকায় প্রতিদিনই লেগে থাকে যানজট। অনেক সময় ঘণ্টা ধরে আটকে থাকেন যাত্রী ও যানবাহন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মাঈদুল ইসলাম বলেন, “রাস্তার উন্নয়ন ছাড়া সেতুর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সেতু পার হওয়ার পর সরু সড়কে নামতে হয়। বিশেষ করে ট্রাক, দূরপাল্লার বাস, অ্যাম্বুলেন্স—সবারই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চিলমারী উপজেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, “সেতু তখনই কার্যকর, যখন উভয় প্রান্তের রাস্তা মানসম্মত হয়। এখন সেতু পার হয়ে দ্রুতই যানজটে আটকে পড়তে হয়।”
২০১৪ সালের অনুমোদিত নকশায় সেতুর সঙ্গে পুরনো ৫০ কিলোমিটার রাস্তা টু-লেন করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরে নকশা পরিবর্তন করে সংযোগ সড়ক টু-লেন না করে ১৮ ফুট প্রস্থে সীমিত করা হয়েছে। এতে চিলমারী অংশের নতুন ৭.৩ কিলোমিটার সড়কে ২০টিরও বেশি বাঁক তৈরি হয়েছে। এগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের চিলমারী উপজেলা কমিটির সভাপতি সোহেল মিয়া বলেন, “সেতু নির্মাণ একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ। সংযোগ সড়ক টু-লেন না হলে সেতু নির্মাণের সুফল অর্ধেকেই থাকে।”
কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, “উলিপুর এলাকায় যানজট নিরসনে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।”
একদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেতু নির্মাণ, অন্যদিকে তারই পাশে অপরিকল্পিত সরু রাস্তা। এর ফলে ভাসানী সেতুর সুফল এখনো পুরোপুরি মিলছে না উত্তরের মানুষের। জরুরি ভিত্তিতে সংযোগ সড়কের টু-লেন উন্নয়ন ও বাজার এলাকায় বিকল্প সড়ক না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
সদ্য সংবাদ/ আতিকুর রহমান



























