সিন্ধু চুক্তি ঘিরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আশঙ্কা

সিন্ধু পানি চুক্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার তো দূরের কথা, উল্টো চুক্তি স্থায়ীভাবে বাতিলের হুমকি দিচ্ছে ভারত। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর উত্তেজনার জেরে এই হুমকি আবারও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ককে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে শীতকালে পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করতে ভারত পদক্ষেপ নিতে পারে বলে শঙ্কা বাড়ছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার দায় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেয় ভারত এবং যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। যদিও মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, তবুও অমীমাংসিত থেকে যায় সিন্ধু পানি চুক্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি। বর্তমানে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ কূটনৈতিক প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও, বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
বিশেষ করে ভারতের সাম্প্রতিক হুমকি সিন্ধু চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে সরে আসা এই উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলছে। পাকিস্তান বরাবরই বলে আসছে, পানির প্রবাহ বন্ধ করাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আলজাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, কোনো পক্ষ একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করতে পারে না, তথাপি ভারতের পক্ষ থেকে যে হুমকি আসছে, তা আংশিকভাবে হলেও পানির প্রবাহ ব্যাহত করতে পারে। এতে পাকিস্তানে চাষাবাদসহ বিভিন্ন খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের সাবেক প্রতিনিধি শিরাজ মেমন জানান, চেনাব নদীতে ভারতের আসন্ন র্যাটেল বাঁধ প্রকল্প শীতকালে পানি আটকে রাখার মাধ্যমে পাকিস্তানের কৃষি নির্ভর অঞ্চলগুলোতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। শীত মৌসুমে পাকিস্তানের পানি সংরক্ষণের সক্ষমতা সীমিত হওয়ায়, ভারতের এমন পদক্ষেপ দেশটির খাদ্য নিরাপত্তাকেও হুমকিতে ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের ভূগোলবিদ অধ্যাপক দানিশ মুস্তাফা বলেন, ‘ভারতের মধ্যে পানিকে কেন্দ্র করে একধরনের উগ্র মনোভাব কাজ করে, তবে পাকিস্তানের পানি-ভীতি অনেকটাই অতিরঞ্জিত।’ তিনি মনে করেন, চুক্তি অনুযায়ী একতরফাভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অনুত্তমা ব্যানার্জি এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন। তার মতে, বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ।
এদিকে, পানিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুধু ভারত-পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ নয়। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী নিয়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে, এবং নীল নদ নিয়ে ইথিওপিয়া, মিসর ও সুদানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। দক্ষিণ এশিয়াতেও গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী নিয়ে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পানি বণ্টন নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।