রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

|৩০ কার্তিক ১৪৩২

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গণতন্ত্র নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে

গণতন্ত্র নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে
ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমা বিশ্বের নয়টি দেশে পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের নাগরিকদের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর হতাশা তৈরি হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর আটটিতেই গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টির হার ৫০ শতাংশের নিচে, আর ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রায় সব দেশের অধিকাংশ মানুষ।

গবেষণা সংস্থা ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।

জরিপ অনুযায়ী, নয় দেশের মধ্যে একমাত্র সুইডেনেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতন্ত্রের কাজকর্মে সন্তুষ্ট—প্রায় ৬৫ শতাংশ। নেদারল্যান্ডসে মতামত প্রায় সমান ভাগে বিভক্ত, যেখানে ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট এবং ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে সন্তুষ্টির হার ৪০ এবং অসন্তুষ্টির হার ৩১ শতাংশ।

অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতি আরও দুর্বল। ছয়টি দেশে গণতন্ত্রে সন্তুষ্টির গড় হার নেমে এসেছে ২৪ শতাংশেরও নিচে। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮, ফ্রান্সে ১৯, যুক্তরাষ্ট্রে ২০, যুক্তরাজ্যে ২৬, স্পেনে ২৭ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া বহু মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্সে ৮১ এবং নেদারল্যান্ডসে ৭৬ শতাংশ মানুষ এমন মত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মন্তব্য করেছেন। তবে পোল্যান্ডে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে—সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আর ৩০ শতাংশ মনে করেন খারাপের দিকে গেছে।

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও সুইডেন ছাড়া সব দেশেই তীব্র উদ্বেগ পাওয়া গেছে। ফ্রান্সে এই হার ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫, নেদারল্যান্ডসে ৭৪, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ।

গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুয়া তথ্য ছড়ানো, রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থার বিস্তার ও দুর্নীতি। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডে ভুয়া তথ্যকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া ও ইতালিতে সর্বোচ্চ উদ্বেগের কারণ দুর্নীতি। ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান গুরুত্বের সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অংশগ্রহণকারীরা কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।

জরিপে সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, অসন্তোষ বাড়লেও গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন এখনও প্রবল। অধিকাংশই মনে করেন সমাজের জন্য এটি অপরিহার্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকা উচিত কি না তা নির্ভর করা উচিত সে দেশের মানুষের জীবনমানের ওপর।

এ ছাড়া বহু দেশে বেড়েছে মৌলিক পরিবর্তনের দাবি। অনেক মানুষের বিশ্বাস, বর্তমান ব্যবস্থা ধনীদের পক্ষে কাজ করে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ। স্পেনে ৫২, ইতালিতে ৫৫, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০, ফ্রান্সে ৬৬ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র‍্যাডিক্যাল পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবু পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা শক্তিশালী হলেও প্রায় সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতাকে গুরুত্ব দেওয়া রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বেশি প্রাধান্য দেয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ