‘যারা একসময় মজলুম ছিল তারা এখন জালিম হচ্ছে’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো পরিষদ নয়, বরং সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনেই এটি গঠিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, যারা একসময় নিজেদের মজলুম দাবি করতেন, আজ তারা কেন জামিন করাতে যাচ্ছেন—এ বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। তাঁর মতে, মজলুম থেকে জালিম হয়ে যাওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক।

শনিবার রাজধানীর বিস অডিটরিয়ামে ‘উইমেন ইন ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

বক্তব্যে তিনি বলেন, অনেকেই দাবি করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকৃত সরকার নয়, এটি একটা পরিষদ। কিন্তু বাস্তবে সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিতেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। দলগুলো চাইলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আরও সহজ হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, নতুন প্রশাসন গঠনের আগে প্রথম আট মাস সরকারকে নানামুখী আন্দোলন সামলাতে হয়, আর ঈদের পর পুরোনো প্রশাসনিক কাঠামো আবারও প্রভাব বিস্তার করে।

মাহফুজ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দোদুল্যমান; একদিকে ঝুঁকলে আরেকদিকে দুলে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোরও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার দায় বেশি পড়ে সেইসব দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর, যাদের ওপর আস্থা রাখা হয়েছিল—এ মন্তব্যও করেন তিনি।

নারীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি সাইবার বুলিংয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে বলেন, এই প্রবণতা জমাটবদ্ধ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তাঁর দাবি, রাষ্ট্র ও সমাজকে আলাদা করে যে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল আওয়ামী লীগ, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়াই এখন সাইবার বুলিংয়ের মতো সামাজিক সমস্যায় দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ অনেকটা দূর করা গেলেও সামাজিক ফ্যাসিবাদ এখনো রয়ে গেছে। সামাজিক বুলিংয়ের সমাধান শুধু আইনি পদক্ষেপে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক সমঝোতার ভিত্তিতে এগোতে হবে।

রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সেটলমেন্ট বদল না হলে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এলিটদের মধ্যে কতটা সমঝোতা ও আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্ষেপ করে বলেন, যারা একসময় নিপীড়নের শিকার ছিলেন, এখন তারাই অন্যদের ওপর জুলুম করছেন।

তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় হোক বা ধর্মীয়—সব ক্ষেত্রেই সমাধানের পথ আলোচনা ও সংলাপের মধ্যেই নিহিত।