শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১১, ১৩ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১২:১২, ১৩ জুলাই ২০২৫

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসা না পেয়ে অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসা না পেয়ে অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা
এআই নির্মিত ছবি

ভারতের চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে সাংবাদিকতায় এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছেন রিগ্যান মোর্শেদ (ছদ্মনাম)। ক্লাস শুরু হলেও এখনও যোগ দিতে পারেননি তিনি, কারণ ভারতের ভিসা মেলেনি। গত ১১ জুন আবেদন করেছিলেন রিগ্যান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা না পাওয়ায় স্কলারশিপ হারানোর শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে শিক্ষাজীবনে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি।

শুধু রিগ্যানই নন, ভিসা-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় পড়েছেন আরও অনেকে। ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা বা ভ্রমণ—সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ভারত ভ্রমণ ভিসা বন্ধ রয়েছে, অন্য ক্যাটাগরির ভিসার অনুমোদনও কমে গেছে। ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত একটি অনানুষ্ঠানিক পেজে রিগ্যানের মতো অসংখ্য কেস স্টাডির খোঁজ মিলেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া কিংবা ইউরোপ-আমেরিকার ভিসাও এখন অনেকের জন্য হাতছোঁয়ার বাইরে।

চাকরিসূত্রে ও পর্যটক হিসেবে একাধিকবার থাইল্যান্ড সফর করেছেন কনা করিম। ইউরোপ ও আমেরিকারও ভিসা রয়েছে তার পাসপোর্টে। অথচ এবছর এপ্রিল মাসে থাই দূতাবাস তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

একজন নিয়মিত চীন সফরকারী ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত তিন বছরে ছয়বার চীনে গেলেও এবার জুন মাসে তার আবেদন বাতিল করা হয়। অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে ইউটিউবার ও ব্লগার নাদির নিবরাসেরও। তিনি জানান, বৈধ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা থাকলেও তাজিকিস্তানের মতো সাধারণ দেশের ই-ভিসাও পাননি। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া আবেদন বাতিল হয়েছে, এমনকি ফিও ফেরত দেওয়া হয়নি।

নাদির বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে অনেক দেশের ভিসা যতটা সহজ বলে মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। মলদোভা ও বাহরাইনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভ্রমণ গ্রুপগুলোতেও এখন হতাশার সুর। অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি জমা দেওয়ার পরও কোনো কারণ না দেখিয়ে আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।

ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, শুধুমাত্র মেডিকেল ও অতি জরুরি ক্ষেত্রে সীমিত ভিসা অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের ভিসার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং ধীরে ধীরে বাকি ভিসাগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

রিগ্যান জানিয়েছেন, তার মতো আরও দুজন শিক্ষার্থী একই কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের ভিসা অনুমোদন হলেও এখনও পাসপোর্ট হাতে পাননি। বাকিরা ভিসার অপেক্ষায় আছেন।

পশ্চিমা দেশগুলোর ভিসাও এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের খরচে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পরও তার ভিসা আবেদন মাত্র দুই মিনিটেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি বলেন, সেদিন তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ভিসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধও। তিনি স্ত্রীসহ ভিসা না পেয়ে ফিরে যান।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাইয়ের পর ভিসা মঞ্জুর করা হয় এবং এটি সম্পূর্ণভাবে কনস্যুলার কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতাও একই রকম। মুবিন এয়ার সার্ভিসের বিপণন কর্মকর্তা রাসেল খান জানান, আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সহজে ভিসা দিত, কিন্তু এখন বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সেখানে প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে।

‘দ্য মনিটর’ পত্রিকার সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম মনে করেন, বেআইনি অভিবাসনের প্রবণতা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এই সমস্যার জন্য দায়ী। তিনি বলেন, এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি।

ভিএফএস গ্লোবালের এক কর্মী জানান, তাদের কাজ শুধুমাত্র আবেদন গ্রহণ ও প্রসেসিংয়ের সহায়তা করা, অনুমোদনের সিদ্ধান্ত তাদের নয়। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বললে, বর্তমানে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার অনেক বেড়ে গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম জানান, ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে—এমন কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে অনেক আবেদনকারী সঠিক কাগজপত্র জমা দেন না। বর্তমানে অধিকাংশ দেশই যাচাই-বাছাই আরও কঠোর করেছে, যা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভিসা আবেদনকারীদের মধ্যে জাল সনদ ও ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সূত্র: জাগোনিউজ