মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডে উত্তাল রাজনীতি, শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত বিএনপির

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর মেরে একজন ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মীকে হত্যা করার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে, একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিকে যুবদল কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তারা অভিযোগ করেছে, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেলেও তিনজন প্রকৃত জড়িতকে আসামি করা হয়নি।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে তারেক রহমান ও বিএনপিকে ঘিরে নানা মন্তব্য ও বিক্ষোভ মিছিল দেখা যায়। এসবের কারণে দলটির অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও র্যাব জানিয়েছে, বুধবারের এই হত্যাকাণ্ড ঘটলেও সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছড়ায় শুক্রবার, যা থেকে ঘটনার ভয়াবহতা সামনে আসে। তারা জানায়, ব্যবসায়িক বিরোধ এবং পূর্বশত্রুতার জেরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যদিও চাঁদাবাজির অভিযোগও আলোচনায় এসেছে।
র্যাব মহাপরিচালক জানান, মূল তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), তবে র্যাব ছায়া তদন্ত করছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক একজন ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও পাথর ছুঁড়ে হত্যা করছে। একজনকে তার শরীরের ওপর উঠে লাফাতে দেখা গেছে। নিহত ব্যক্তির বোন মামলার এজাহারে জানিয়েছেন, তার ভাই ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আসামিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, বুধবার সন্ধ্যায় দা, লোহার রড ও সিমেন্টের ব্লকসহ সশস্ত্র অবস্থায় আসামিরা দোকানে প্রবেশ করে, কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তার ভাইকে টেনে-হিঁচড়ে হাসপাতাল গেটের ভেতরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এসব মিছিল থেকে তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেছেন, মূল অভিযুক্ত তিনজনকে বাদ দিয়ে পুলিশ নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিরা গ্রেফতার না হয়ে অন্যদের কেন আসামি করা হলো।
র্যাব প্রধান একেএম শহিদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে। ডিএমপি তদন্ত করছে, র্যাব সহযোগিতা করছে।
এদিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন, দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তার মতে, অনেক ঘটনা ভুল প্রমাণিত হলেও বিএনপিকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী করা হয়।
তিনি জানান, দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজন হলে অগ্রিম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, দল হিসেবে তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, সরকার মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ২০০২ সালের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।