রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

|৩০ কার্তিক ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৯ জুলাই ২০২৫

কারাগারে পৃথক ওয়াশরুম চাচ্ছেন সালমান, নীরব আমু-আনিসুল 

কারাগারে পৃথক ওয়াশরুম চাচ্ছেন সালমান, নীরব আমু-আনিসুল 

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশেই নির্মিত হয়েছে একটি বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার, যার উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাখা। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। কারাগারের ভাষায় তারা ‘বিশেষ বন্দি’ বা ভিআইপি।

এই ভিআইপি বন্দিদের জীবনযাত্রা নিয়ে অনেকের কৌতূহল। জানা গেছে, সময় কাটছে আদালতে যাতায়াত, নামাজ পড়া, বই ও পত্রিকা পড়া, হাঁটাহাঁটি এবং শুয়ে-বসে থাকার মধ্য দিয়ে। প্রতিজন বন্দি একটি করে টেবিল, চেয়ার, বিছানা ও দৈনিক পত্রিকা পাচ্ছেন। অন্য কারাগারে টেলিভিশন দেখার সুযোগ থাকলেও এখানে নেই, তাই অনেকে অতিরিক্ত সুবিধার দাবি করছেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, কারাবিধির বাইরে সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়।

বিশেষ কারাগারটি চালু হয় ২১ জুন। প্রথমে ৪৭ জন সাধারণ বন্দিকে এখানে আনা হয়। এরপর ২৩ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৪ জন এবং ১ জুলাই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ও হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে আরও বন্দি স্থানান্তর করা হয়। কারাগারটির ধারণক্ষমতা ৩০০ হলেও বর্তমানে এখানে বন্দি আছেন ৯৫ জন, যার মধ্যে ৪৮ জন ভিআইপি।

প্রতিটি ওয়ার্ডে চারজন করে ভিআইপি বন্দি রয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে তারা ওয়ার্ডের বাইরে বের হতে পারছেন না। দরকারি জিনিস সেবক বন্দিদের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছেন।

ভিআইপি বন্দিদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আমির হোসেন আমু, সাধন চন্দ্র মজুমদার, শাহজাহান ওমর, নূরুল মজিদ হুমায়ুন, নুরুজ্জামান আহমেদ, আনিসুল হক, কামরুল ইসলাম, জুনাইদ আহমেদ পলক, ফরহাদ হোসেন, ডা. এনামুর রহমান, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল।

কারা সূত্রে জানা গেছে, সালমান এফ রহমান মূলত ধর্মীয় বই পড়েই সময় কাটান। নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয় তাকে। সম্প্রতি তিনি জানালায় নতুন পর্দা, পৃথক ওজুখানা ও ওয়াশরুম চেয়েছেন, তবে তা অনুমোদিত নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শাজাহান খান কারাগার প্রাঙ্গণে হাঁটতে চাইলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুমতি পাননি। তবে তার ভবনের ওয়াকওয়েতে হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আতিকুল ইসলাম ও জ্যাকব একই রুমে থাকেন এবং একসঙ্গে হাঁটা ও ব্যায়াম করেন।

জুনাইদ আহমেদ পলক বই পড়েন বেশি, বিশেষ করে উপন্যাস। কোমর ব্যথার কারণে বেল্ট পরে থাকেন এবং আদালতে যেতে হয় প্রায়ই। আনিসুল হক চুপচাপ থাকেন এবং কোনো অতিরিক্ত চাহিদা নেই তার। কামরুল ইসলাম শারীরিকভাবে দুর্বল, অধিকাংশ সময় বিশ্রামে থাকেন।

আমির হোসেন আমুও প্রায় নিঃশব্দে সময় কাটান। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এবং বিচারপতি মানিক একই রুমে থেকে আইনবিষয়ক বই পড়েন। ফরহাদ হোসেন বই পড়া ও হাঁটাহাঁটিতে সময় দেন, এবং বাংলা অনুবাদে প্রকাশিত বিদেশি বই পছন্দ করেন। তিনি লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করার পরামর্শও দিয়েছেন। ডা. এনামুর রহমান অসুস্থ ছিলেন, বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হলেও বাইরে যান না।

অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী ভিআইপি বন্দিদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের জীবনযাপন নিয়ন্ত্রিত এবং নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

সর্বশেষ