আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক আলোচনা
বাংলাদেশের জন্য নেই কোনো নতুন প্রস্তাব, তবুও অগ্রগতির আশাবাদ

ওয়াশিংটন ডিসিতে তিন দিনব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ট্যারিফ আলোচনার প্রথম দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানান, আলোচনার প্রাথমিক ধাপ ইতিবাচক হয়েছে এবং উভয়পক্ষ চূড়ান্ত চুক্তির আশায় আশাবাদী।
আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলে কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি এবং মেধাস্বত্বসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশ পক্ষ থেকে উপস্থাপিত যুক্তিগুলো মার্কিন প্রতিনিধিরা গুরুত্বসহকারে শোনেন, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।
ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালভাবে অংশ নেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডিএম সালাহউদ্দিন মাহমুদ। আগামীকাল মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ বশির উদ্দীনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৭ জুনের প্রাথমিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কিছু প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফুড ড্রিংক, বোয়িং বিমান ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানির প্রস্তাব এবং আমদানি পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট ধাপে ধাপে কমানোর সুপারিশ। তবে বড় কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনার কথা দূতাবাস অস্বীকার করেছে।
মূলত এপ্রিলেই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় ২৭ জুন। বর্তমান আলোচনা চলছে ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত, যেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে ১ আগস্টের মধ্যে। দেরিতে আলোচনা শুরু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, প্রেস মিনিস্টার জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই পর্দার আড়ালে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা গোপনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি প্রথম দিনের আলোচনার ছবি তোলাও নিষিদ্ধ ছিল।
ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে গণমাধ্যমে জানানো হলেও, প্রেস মিনিস্টার মোর্তোজা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। যদিও গত ২ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে জানান, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ ট্যারিফ চুক্তি করেছে, যেখানে তৃতীয় দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।
ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা একাধিক সফরের মাধ্যমে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন এবং চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায় করেন। এমনকি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট প্রকল্পও আলোচনার অংশে আনা হয়।
বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আসছে। তবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা পরে কমে ৩৫ শতাংশে নামে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় না পৌঁছালে ১ আগস্ট থেকে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে বাংলাদেশকে।
এদিকে হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি পণ্যের মূল্যস্ফীতি চলতি বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এতে করে ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যারিফ নীতির পক্ষে জনমত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।- সূত্র: মানবজমিন