ঢাকায় বিজিবি–বিএসএফ বৈঠক, প্রাধান্য পাবে হত্যা-অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুশইন ও গুলিতে হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার ঢাকায় শুরু হয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চার দিনের সম্মেলন। বৈঠকে মূলত পুশইন, সীমান্ত হত্যা, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত অপরাধ নিয়ে আলোচনা হবে।
ঢাকার বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এ বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনায় তারা সীমান্ত অপরাধ দমন, বিএসএফ সদস্যদের ওপর বাংলাদেশি নাগরিকদের হামলা প্রতিরোধ এবং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলবে।
অন্যদিকে, বিজিবি এ বৈঠকে পুশইন ও সীমান্ত হত্যার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে চায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘বিজিবি সম্মেলনে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার আগে রাখবে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারত থেকে বিভিন্ন সীমান্তপথে ২ হাজার ১৯৬ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সীমান্তে সর্বাধিক ৫৭৫ জন এবং মৌলভীবাজার সীমান্তে ২৫৪ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে জাতিসংঘে নিবন্ধিত অন্তত ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ও শতাধিক ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় ভারতীয় নাগরিক বৈধ ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে দিল্লির দানেশ, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সোনালী খাতুন ও আট বছরের সন্তান, এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সুইটি বিবি ও তার দুই ছেলে ছিলেন। স্থানীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় পুলিশ তাদের বাংলাদেশি ভেবে আটক করে বিএসএফের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম সীমান্তে ঠেলে দেয়। পরে তারা ঘুরতে ঘুরতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে ধরা পড়েন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ১৭ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছরের একই সময়ে নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সীমান্তে প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে। অথচ ভারত এর আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সীমান্তে প্রাণঘাতী ঘটনার সংখ্যা কমাতে তারা সংযম দেখাবে।
বিজিবি আলোচনায় সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, নদী ভাঙন রোধ, যৌথ নদীর পানি বণ্টন ও ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়গুলোও তুলবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথমবারের মতো বিজিবি–বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই বৈঠক সীমান্ত সমস্যা সমাধানের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।