ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে সরব যুক্তরাজ্যের অর্ধশতাধিক এমপি

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গাজার সব বাসিন্দাকে রাফার ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি শিবিরে জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণার পর, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ জন লেবার পার্টির এমপি অবিলম্বে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মাঝারি ও বামপন্থি মতাদর্শের ব্যাকবেঞ্চার এমপিরা বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেন যে, তারা বিশ্বাস করেন গাজায় জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে।
তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন ইসরায়েল সরকারকে রাফা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং এর পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
চিঠিটি পাঠানো হয় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বক্তব্যের পরপরই, যেখানে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের আহ্বান জানান।
চিঠিতে এমপিরা লেখেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সোমবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি গাজার সকল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে রাফার ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরে একটি শিবিরে জোরপূর্বক স্থানান্তর করতে চান, যেখানে তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতিও থাকবে না এমন ঘোষণার পর আমরা গভীর উদ্বেগ নিয়ে আপনার কাছে লিখছি।’
তারা আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনাকে শীর্ষস্থানীয় ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্দ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের একটি কার্যকরী পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি গাজার দক্ষিণ প্রান্তে জনসংখ্যা স্থানান্তরের মাধ্যমে, গাজা উপত্যকার বাইরে তাদের নির্বাসনের প্রস্তুতি।’
‘এটি নিখুঁত বর্ণনা হলেও, আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট ভাষা আছে—এটি হলো গাজার জাতিগত নির্মূল।’
চিঠিতে পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে এর মধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন—ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থাকে অর্থায়ন এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা।
তবে অন্যান্য দাবি আরও বিতর্কিত হতে পারে, যেমন ওয়েস্ট ব্যাংকে ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
এমপিরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা যদি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিই, তাহলে আমরা আমাদের নিজস্ব দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করি এবং একটি বার্তা দিই যে বর্তমান পরিস্থিতি চলতেই পারে, যার ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত মুছে ফেলা ও দখল করার পথ তৈরি হয়।’
সরকারের পরিকল্পনা হলো, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে, ‘সর্বোচ্চ প্রভাবের মুহূর্তে’ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া—তবে সেই ‘সর্বোচ্চ প্রভাবের’ সময় কোনটি, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।
পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আমরা তা তখনই করব, যখন এটি শান্তি প্রক্রিয়াকে সর্বাধিক সহায়তা করবে।’
ইতোমধ্যেই ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আর ফ্রান্স, যারা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, তারা সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ মিত্র দেশগুলোর ওপর সমন্বিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ তৈরি করছে।
এই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে তার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে ম্যাখোঁ বলেন, ‘আজ যদি আমরা গাজায় শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই, তাহলে আমরা বিশ্বকে জানাই যে ইউরোপীয়রা মানবজীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দ্বৈত নীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই, কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের দিনে আমরা যদি একসঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা শুরু করি, সেটিই শান্তির একমাত্র পথ।’
এটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্বিতীয়বারের মতো লেবার এমপিদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি, তবে এবারই প্রথম তারা জনসমক্ষে নিজেদের নাম প্রকাশ করেছেন। আগের চিঠিতে কয়েকজন সংসদীয় সহকারী ও জুনিয়র মন্ত্রীও স্বাক্ষর করেছিলেন।
এই চিঠির আয়োজন করেছে ‘লেবার ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট’ এবং এতে ৫৯ জন এমপি স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের দুই চেয়ার সারা ওয়েন এবং অ্যান্ড্রু প্যাকেস। অন্যান্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিজনেস সিলেক্ট কমিটির চেয়ার লিয়াম বাইর্ন, টানম্যানজিত সিং ধেসি, এবং প্রভাবশালী ব্যাকবেঞ্চার স্টেলা ক্রিসি, ক্লাইভ লুইস, ডায়ান অ্যাবট এবং ডন বাটলার।