গুজরাট থেকে ২৫০ জনকে সীমান্তে এনেছে ভারত, শিগগিরই ‘পুশইন’

ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে প্রায় ২৫০ জনকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটির বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নেয় ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ), গুজরাট পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গুজরাট পুলিশের দাবি, দুই মাস ধরে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা ‘অবৈধভাবে বসবাসকারী’ বাংলাদেশি। এরপর শুরু হয় তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, সরকারি প্রটোকল অনুসারে আটক ব্যক্তিদের আইএএফের এয়ারবাস এ৩২১ বিমানে করে ভাদোদরার বিমান ঘাঁটি থেকে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের স্থলপথে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।
গুজরাট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের অস্থায়ী আটককেন্দ্রে রাখা হয় এবং পরে বিএসএফ, ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এ বছরের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও ফেরত পাঠাতে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দেয়। এরই অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ নজরদারি জোরদার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিএসএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিলেও, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সমন্বয় ছাড়া এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, নাগরিক পরিচয় যাচাই না করে ও বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই কাউকে অন্য দেশে পাঠানো মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
এর আগেও গুজরাটে এপ্রিলে পরিচালিত এক অভিযানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়। পরে তদন্তে দেখা যায়, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। একই ধরনের পরিস্থিতি আসামেও দেখা দিয়েছে, যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।