শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

|২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২১ জুলাই ২০২৫

বেলুচিস্তানে অনার কিলিংয়ের ভিডিও ভাইরাল

বেলুচিস্তানে অনার কিলিংয়ের ভিডিও ভাইরাল
ছবি: ইন্টারনেট

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে 'অনার কিলিং'-এর নামে এক যুগলকে গুলি করে হত্যার একটি নির্মম ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন ব্যক্তি নির্মমভাবে ওই যুগলকে গুলি করে হত্যা করছে। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে। তবে ভিডিওটি সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি আলোচনায় আসে।

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি ঘটনাটিকে ‘সামাজিক মূল্যবোধ ও মানব মর্যাদার প্রকাশ্য অপমান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে তিনি জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুলিশকে এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’

সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানান, মুখ্যমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনাস্থল শনাক্ত করে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের নৃশংসতা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। যারা রাষ্ট্রের মর্যাদা চ্যালেঞ্জ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত যুগল প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের এই সম্পর্কই ‘অনার কিলিং’-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার নামে হত্যার প্রবণতা সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। নারীর পছন্দমতো বিয়ে, প্রেমের সম্পর্ক বা শুধুমাত্র কোনো পুরুষের সঙ্গে কথোপকথনের অভিযোগেই নারীকে হত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। এই প্রবণতার পেছনে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, নারীর ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করা এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগ অন্যতম কারণ।

অনেক ক্ষেত্রেই হত্যাকারীরা পরিবার সদস্য হওয়ায় মীমাংসার মাধ্যমে রেহাই পেয়ে যায়, ফলে অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যায়। এতে করে এ ধরনের সহিংসতা আরও উৎসাহিত হয়।

তবে মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণে ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে। যদিও আইনি পদক্ষেপ ও বিচারে কখনও কখনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, তবুও সমাজে বিদ্যমান মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড পুরোপুরি রোধ করা কঠিন।