বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ১৯ আগস্ট ২০২৫

এনবিআরের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদ যাচাই করবে দুদক

এনবিআরের ১৭  কর্মকর্তার সম্পদ যাচাই করবে দুদক

জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শীর্ষ পর্যায়ের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(১) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৭ নম্বর বিধির আলোকে নির্ধারিত ছক অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যেসব কর্মকর্তার সম্পদ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন— কর কমিশনার (কর অঞ্চল-৩) এম এম ফজলুল হক, কর আপিল ট্রাইব্যুনালের কমিশনার লোকমান আহমেদ, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাহেলা সিদ্দিক, অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারিক রিকাবদার, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা সাহরিন সুস্মিতা, কর অ্যাকাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মো. মোরশেদ উদ্দিন খান, কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, কর অঞ্চল-১৬ এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, রেলওয়ে কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট পূর্বাঞ্চলের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু, এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাছান, সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, এনবিআরের সদস্য মো. লুৎফুল আজিম এবং সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম।

গত জুলাই মাসেই দুদক জানিয়েছিল, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এতে একদিকে তারা নিজেরা লাভবান হন, অন্যদিকে প্রতিবছর রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়।

অভিযোগে আরও উঠে এসেছে, ঘুষ না পেলে কর কর্মকর্তারা ভুয়া কর ফাঁকির মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন। আবার অনেক করদাতাকে তাদের প্রাপ্য ফেরত পেতে ঘুষ দিতে হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, কর ফেরতের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ব্যক্তিগতভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্টেশনে দায়িত্ব পালনের সময় এই কর্মকর্তারা শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকিতে সহযোগিতা করে ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এতে রাষ্ট্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মও বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় দুই সপ্তাহ আন্দোলন করেন। সরকারের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করলেও পরবর্তী সময়ে আবারও আন্দোলনে নামে। জুনের শেষ দিকে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলন শেষ হওয়ার পর থেকেই অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আন্দোলনে না থাকা অনেকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ