শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৩ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৯:১৭, ১৩ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় পানি আনতে যাওয়া শিশুদের মৃত্যু

ইসরায়েলি হামলায় পানি আনতে যাওয়া শিশুদের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

মধ্য গাজায় পানির জার ভরে আনতে অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন শিশু রয়েছে—এমন তথ্য জানিয়েছেন গাজার জরুরি সেবা কর্মকর্তারা।

রোববারের এই হামলায় আহত হন আরও ১৬ জন, যাদের মধ্যে সাতজন শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছেন নুসাইরাতের আল-আউদা হাসপাতালের এক চিকিৎসক। নিহতদের মরদেহ ওই হাসপাতালেই আনা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি পানির ট্যাঙ্কারের পাশে খালি জার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভিড়ে একটি ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইসলামিক জিহাদের একজন ‘সন্ত্রাসীকে’ লক্ষ্য করে হামলা চালাতে গিয়ে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে গোলাটি লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক ডজন মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। ঘটনাটি পর্যালোচনার অধীন বলেও জানিয়েছে তারা।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা এ ঘটনায় বেসামরিক হতাহতের ‘দাবি সম্পর্কে অবগত’ এবং ‘যতটা সম্ভব বেসামরিক ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা’ করে থাকে। আইডিএফ আরও বলেছে, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমরা দুঃখ প্রকাশ করি।’

হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যাচাই না করা ফুটেজে রক্তাক্ত শিশু ও নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে, সঙ্গে আতঙ্ক ও হতাশার আর্তচিৎকার।

স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ব্যক্তিগত যানবাহন ও গাধার গাড়িতে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান।

এই হামলার সময় গাজাজুড়ে ইসরায়েলের বিমান হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, রোববার গাজার মধ্যাঞ্চল ও গাজা শহরে তিনটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফায় তাদের ফিল্ড হাসপাতালে গত ছয় সপ্তাহে যতজন গণহত্যার শিকার রোগী এসেছে, তা আগের ১২ মাসের তুলনায় অনেক বেশি।

শুক্রবার হাসপাতালটি জানায়, শনিবার সেখানে অস্ত্রজনিত আঘাত নিয়ে ১৩২ জন রোগী ভর্তি হন, যাদের মধ্যে ৩১ জন মারা যান।

আইসিআরসি বলেছে, ‘অত্যাধিক সংখ্যক’ রোগীর শরীরে গুলির আঘাত ছিল এবং সকল সচেতন রোগী জানিয়েছেন, তারা খাবার সংগ্রহের স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

গত ২৭ মে গাজায় নতুন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র চালুর পর থেকে হাসপাতালটি ৩,৪০০ জন অস্ত্রআহতের চিকিৎসা করেছে এবং ২৫০টির বেশি মৃত্যু রেকর্ড করেছে—যা আগের পুরো বছরের সব গণহত্যার চেয়েও বেশি।

আইসিআরসি বলেছে, ‘এই গণহত্যার ঘটনার আশঙ্কাজনক ঘনঘটা ও ব্যাপকতা গাজাবাসীর ভয়াবহ পরিস্থিতিকে তুলে ধরে।’

শনিবার, দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতাল জানায়, একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে ২৪ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লোকজন খাবার সংগ্রহের জন্য জড়ো হলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।

তবে আইডিএফ দাবি করেছে, ওই এলাকায় তাদের গুলিতে ‘আহতের কোনো খবর নেই।’ এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, আইডিএফ যাদের হুমকি মনে করেছিল, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর শুক্রবার জানায়, এখন পর্যন্ত তারা ৭৮৯ জন ত্রাণসংশ্লিষ্ট মৃত্যুর রেকর্ড করেছে।

তাদের মধ্যে ৬১৫ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর আশপাশে, যা ২৭ মে চালু হয় এবং যেখানে মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিরা সামরিক এলাকার ভেতরে কাজ করছে।

বাকি ১৮৩টি মৃত্যু জাতিসংঘ বা অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ কনভয়ের কাছাকাছি হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, কিছু ঘটনায় বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তারা ‘জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

তবে জিএইচএফ জাতিসংঘকে ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ পরিসংখ্যান ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে, যা গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া।

জিএইচএফ প্রধান জনি মুর আগেই বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তিনি ত্রাণকেন্দ্রের পাশে মৃত্যু অস্বীকার করছেন না, তবে বলেছেন, ‘এইসব হতাহতের ১০০% জিএইচএফের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে হয়েছে’—এমন দাবি ‘সত্য নয়’।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, এমনকি বিবিসিকেও গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি নেওয়ার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তারপর থেকে গাজায় অন্তত ৫৭,৮৮২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার অধিকাংশ বাসিন্দাই একাধিকবার ঘরছাড়া হয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, গাজার ৯০% এর বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকট চরমে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সপ্তাহে ১৩০ দিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৭৫,০০০ লিটার জ্বালানি গাজায় প্রবেশ করেছে—’জনগণের প্রতিদিনের প্রয়োজন ও জরুরি ত্রাণ কাজের জন্য যা মোটেই যথেষ্ট নয়।’

শনিবার জাতিসংঘের নয়টি সংস্থা সতর্ক করেছে, গাজার জ্বালানির সংকট ‘সঙ্কটজনক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে হাসপাতাল, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক এবং বেকারিগুলোর কার্যক্রম থেমে যাবে।

‘হাসপাতালগুলো অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, প্রসূতি, নবজাতক ও আইসিইউ ইউনিট অচল হয়ে পড়ছে, এবং অ্যাম্বুলেন্স চলতে পারছে না,’—বলা হয়েছে জাতিসংঘের বিবৃতিতে।