রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

|৩০ কার্তিক ১৪৩২

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২১ অক্টোবর ২০২৫

‘সাধারণ নাগরিকদের জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য খোলামেলা পোশাক’

‘সাধারণ নাগরিকদের জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য খোলামেলা পোশাক’
ছবি: এক্স হ্যান্ডেল

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের ভিডিও ফাঁস হয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিলাসবহুল সেই আয়োজনে কনে ও তাঁর মায়ের খোলামেলা পোশাক দেশটির কঠোর হিজাবনীতির বিপরীতে গিয়ে শাসকগোষ্ঠীর ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহল।

ফাঁস হওয়া ভিডিওটি ২০২৪ সালের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের, যেখানে শামখানি নিজ হাতে মেয়েকে নিয়ে তেহরানের এসপিনাস প্যালেস হোটেলের অভিজাত ওয়েডিং হলে প্রবেশ করছেন। কনে ফাতিমেহর পরনে ছিল উন্মুক্ত গলা ও কাঁধখোলা সাদা পোশাক, মাথায় পাতলা স্বচ্ছ ঘোমটা। শামখানির স্ত্রীর পোশাকও ছিল নীল লেইসের গাউন, খোলা পিঠ ও পার্শ্ববিশিষ্ট, মাথায় ওড়নাও ছিল না। অনুষ্ঠানে আরও কয়েকজন নারীকে হিজাববিহীন অবস্থায় দেখা গেছে।

While the Iranian regime yesterday announced that 80,000 morality police will be deployed to hunt, beat, and even kill women for showing a single strand of hair, the bride, the daughter of Ali Shamkhani, the head of Iran’s Supreme National Security Council, celebrated her wedding… pic.twitter.com/Ywtat71qQq

— Jino Victoria Doabi ‏ژینۆ ویکتوریا دو‌آبی (@_jvd9) October 18, 2025

আলী শামখানি ইরানের প্রভাবশালী নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য। তিনি নারীদের জন্য কঠোর ইসলামি বিধান প্রয়োগের প্রবল সমর্থক ছিলেন এবং ২০২২ সালের হিজাববিরোধী আন্দোলন দমনে শক্ত হাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন হাজার হাজার নারী রাস্তায় নেমে হিজাব পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, আর শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। ইরানের নির্বাসিত সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী মসিহ আলিনেজাদ এক্সে লেখেন, ‘যে আলী শামখানি সামান্য চুল খোলা রাখায় নারীদের প্রহার করতে বলেছিলেন, তাঁর মেয়েই এখন ডানাকাটা পোশাকে বিয়ে করছেন। অথচ সাধারণ তরুণেরা বিয়ের সামর্থ্য পর্যন্ত পাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ভিডিও লাখো ইরানির ক্ষোভ উসকে দিয়েছে। খামেনি সরকার জোর করে জনগণের ওপর ইসলামি মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়, কিন্তু নিজেদের জীবনে কোনো সীমাবদ্ধতা মানে না। এটি ভণ্ডামি নয়, বরং তাদের ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র।’

ইরানি সাংবাদিক আমির হোসেইন মোসাল্লাও একই সুরে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘এই ভিডিও প্রমাণ করে শাসকরা নিজেরাই তাদের আরোপিত আইন বিশ্বাস করে না। তারা শুধু জনগণকে কষ্ট দিতে চায়।’

ইরানের সংস্কারপন্থী পত্রিকা শার্ঘ সোমবার প্রথম পাতায় শামখানির ছবি ছেপে শিরোনাম দেয়—‘কেলেঙ্কারিতে খুঁড়ল কবর’।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ডন ইনস্টিটিউট-এর ইরান বিশেষজ্ঞ ওমিদ মেমারিয়ান নিউইয়র্ক টাইমস-কে বলেন, ‘এটাই ভণ্ডামির সবচেয়ে খাঁটি উদাহরণ।’ নারী অধিকারকর্মী এলি ওমিদভারি মন্তব্য করেন, ‘তাদের কনে প্রাসাদে, আমাদের কনে কবরের নিচে।’

এমনকি খামেনির ঘনিষ্ঠ রেভল্যুশনারি গার্ডসের সংবাদমাধ্যম তাসনিমও শামখানির আচরণের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের জীবনযাপন হওয়া উচিত সাদামাটা ও শালীন। তবে তারা ব্যক্তিগত ভিডিও প্রকাশ করাকে ‘অনৈতিক’ বলেও মন্তব্য করেছে।

অন্যদিকে, শামখানি দাবি করেছেন যে ভিডিওটি ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ফাঁস করেছে। ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, শামখানির বক্তব্য অনুযায়ী ‘মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হ্যাকিং এখন ইসরায়েলের নতুন কৌশল’।

এ বিষয়ে সাবেক ইরানি মন্ত্রী এজাতোল্লাহ জরগামি শামখানির পক্ষে মন্তব্য করে বলেন, ‘তিনি অনুষ্ঠানে মাথা নিচু করে ছিলেন, আর আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কেবল নারীরা ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা

সর্বশেষ