শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২১ জুলাই ২০২৫

গাজায় ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ১১৫

গাজায় ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ১১৫
ছবি: ইন্টারনেট

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৫ ফিলিস্তিনি। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষ। চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে এটাই ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। খবর! আল জাজিরা।

সোমবার (২১ জুলাই) এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিং এলাকায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে সেখানে অন্তত ৬৭ জন নিহত হন। দক্ষিণে এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে আরও ছয়জন নিহত হন। এর আগের দিন একইভাবে প্রাণ হারান আরও ৩৬ জন। মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।

ত্রাণ নিতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আহমেদ হাসুনা। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে একজন যুবক ছিল। হঠাৎ গ্যাস নিক্ষেপ শুরু হয়। গ্যাসেই আমাদের শেষ করে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। কোনোভাবে পালিয়ে এসে একটু নিশ্বাস নিতে পারলাম।’
আরেক বাসিন্দা রিজেক বেতার জানান, আহত এক বৃদ্ধকে সাইকেলে করে সরিয়ে আনতে হয় তাকে। তার কথায়, ‘আমরাই তাকে এনেছি। এখানে অ্যাম্বুলেন্স নেই, খাবার নেই, জীবন নেই, বেঁচে থাকার পথ নেই। আল্লাহই আমাদের সহায় হোন।’

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, গাজায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ২৫ ট্রাকের ত্রাণবহরে গুলি চালানো হয়। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত বেসামরিক মানুষের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা তাৎক্ষণিক হুমকির জবাবে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে, তবে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ বহর লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় পরিস্থিতি এখন ‘বিপর্যয়কর’। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি মারাত্মকভাবে বেড়েছে এবং অনেকেই খাবার পাওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে।

ওসিএইচএ-র ভাষ্য, ‘মানুষ জীবন বাজি রেখে খাবার খুঁজছে। এটি সম্পূর্ণ অমানবিক।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস মন্তব্য করেছে, ক্ষুধার্ত নারী, শিশু এবং পুরুষদের ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা নিছক মানবিক বিপর্যয় নয়, এটি একটি গণহত্যা। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, ‘পশ্চিমা সরকারগুলো চোখের সামনে সবকিছু দেখছে— মানুষকে না খাইয়ে মারা হচ্ছে, ঘরছাড়া করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে— তবুও তারা চুপ করে আছে।’

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানান, গাজার কর্মীরা হতাশায় বারবার বার্তা পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সবই মানবসৃষ্ট এবং একেবারে দায়মুক্তিতে ঘটছে। কয়েক কিলোমিটার দূরে খাদ্য মজুদ থাকলেও তা পৌঁছাচ্ছে না।’

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তাদের কাছে গাজার সীমান্তে তিন মাসের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে, কিন্তু গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল তা আটকে রেখেছে।

গাজার প্যালেস্টিনিয়ান মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ জানিয়েছেন, বহু নারী ও শিশু ক্ষুধার কারণে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছি। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে শত শত মানুষ ম্যালনিউট্রিশন ও পানিশূন্যতায় ভুগছেন এবং যেকোনো সময় তাদের মৃত্যু হতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭১টি শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে এবং আরও ৬০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টির লক্ষণ দেখাচ্ছে। শুধু রোববারেই ক্ষুধার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।