বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৫ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১৪ জুলাই ২০২৫

১৪ জুলাইয়ের রাতে বদলে যায় আন্দোলনের গতিপথ

১৪ জুলাইয়ের রাতে বদলে যায় আন্দোলনের গতিপথ
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মোড় সেদিন রাতে ঘুরে যায় নারী শিক্ষার্থীদের সাহসী অংশগ্রহণে। রাতভর উত্তাল থাকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। হলের তালা ভেঙে মিছিলে নামেন শিক্ষার্থীরা, নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রীরাই।

রাত ১০টার দিকে বিদ্যুৎহীন ক্যাম্পাসে বিজয় একাত্তর হলে প্রথম গর্জে ওঠে স্লোগান-‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের ভাষা। শিক্ষার্থীরা জানান, শেখ হাসিনার এক বক্তব্য যেন ঘি ঢেলে দেয় আগুনে। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা যদি না পান, রাজাকারের নাতিপুতিরা কেন চাকরি পাবে?”

এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যেই প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি তবে রাজাকারের নাতিপুতি?” স্লোগান হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার, “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার”-এর বিপরীতে জন্ম নেয় এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ।

রোকেয়া হল থেকে শুরু করে সকল ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা থালা-বাটি বাজিয়ে জাগিয়ে তোলেন অন্ধকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা বলেন, “আমরা রাজাকার বলে নিজেরাই নিজেদের ডেকে বের হয়েছি-যাতে কেউ আমাদের ভয় না দেখাতে পারে।”

ভোরে ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন নারী শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের অনেকে তখনও হলে অবরুদ্ধ। ছাত্রীদের দৃঢ় অবস্থানে সাহস ফিরে পান ছাত্ররাও। কিন্তু এর পরপরই ছাত্রলীগ ও সরকারের বাহিনীর পক্ষ থেকে নারীদের ওপর চালানো হয় হামলা। ছাত্রীদের মারধর করা হয়, হাসপাতালে নিয়েও শান্তি মেলে না—সেখানেও হামলা হয়।

এই হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পী, শ্রমিক-সবাই নেমে আসেন রাজপথে।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “নারীদের ওপর হামলার ভিডিও দেখেই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় নামেন।”
অন্য এক ছাত্রী বলেন, “তারা (সরকার) আমাদের ওপর ট্যাগ লাগাতে পারছিল না, কারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছিল না। তাই আক্রোশটা নারীদের ওপর গিয়ে পড়ে।”

এই নারী জাগরণই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে রূপ দেয় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে। ঐ রাত হয়ে ওঠে ইতিহাসের এক মোড়বদলের মুহূর্ত-যেখানে অন্ধকার থেকেই জন্ম নেয় নতুন সাহস, নতুন বাংলাদেশ।

সর্বশেষ