সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর ও ইট দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার ও শনিবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ ব্যানারে প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা স্লোগান দেন ‘চাঁদাবাজের কবর খোঁড়’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর’, ‘সন্ত্রাসীদের স্থান নেই’, ‘চাঁদা না দিলে জীবন যাবে এ কেমন সমাজ!’ ইত্যাদি। একই সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরাও পৃথকভাবে বিক্ষোভে অংশ নেন।
এর আগের রাতে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী মিছিল বের করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, ‘চাঁদাবাজদের হাতে মানুষ মারা পড়ছে। একজন ব্যবসায়ী শুধু চাঁদা না দেওয়ায় প্রাণ হারালেন। এটাই কি সভ্যতা?’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হয়ে সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে গিয়ে শেষ করেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্রোহী হলের নিচ থেকে মিছিল শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সালাম হল থেকে মিছিল বের করে শহীদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাতভর বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে ১০ মিনিটের জন্য ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
তবে এই বিক্ষোভের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ছাত্রদল শাখা একই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করলেও তারা দলীয় অবস্থান থেকে বক্তব্য রাখে।
সোহাগ (৩৯) মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক ইট ও পাথরের আঘাতে তার শরীর থেঁতলে দেয়, পরে তাকে বিবস্ত্র করে মারধর চালায়। হত্যাকাণ্ডে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের কয়েকজন নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে।
সারাদেশের শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও কঠোর বিচার দাবি করেছেন এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন বর্বরতা না ঘটে, সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।