শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১১:০৩, ১১ জুলাই ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে ২১ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, বিপর্যস্ত জনজীবন 

টানা বৃষ্টিতে ২১ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, বিপর্যস্ত জনজীবন 
ছবি: সংগৃহীত

টানা বৃষ্টিতে ২১ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, বিপর্যস্ত জনজীবন কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আউশ ধান ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর, আমনের বীজতলা ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর, শাকসবজি ৯ হাজার ৬৭৩ হেক্টর, এবং অন্যান্য ফসল মিলিয়ে মোট ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুমিল্লার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। নোয়াখালীতে ৭ হাজার ৮০৬ এবং ফেনীতে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। এ অবস্থায় আমনের বীজতলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বীজতলা দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে কৃষকদের নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হতে পারে, যা উৎপাদন ও শস্যচক্রে প্রভাব ফেলবে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘আমন বীজতলা ও শাকসবজি সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। আরও এক-দুই দিন পানি না নামলে সব শেষ হয়ে যাব’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে, জেলা পর্যায়ের মাঠকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত জমির তালিকা তৈরি ও কৃষকদের সহায়তা দিতে কাজ করছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর পুনর্বাসন ও বীজ সহায়তা দেওয়া হবে।

বৃষ্টির কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়ও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। আগমনী গেট ও ক্যানোপি পার্কিং এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বালতি ও অন্যান্য পাত্র ব্যবহার করে পানি ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়েছে।

ফেনীতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি স্থানে ভাঙনের ফলে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক এলাকায় বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নোয়াখালীর মাইজদী ও চৌমুহনী এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ও সরকারি কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। সড়কগুলোর কোথাও দেড় ফুট, কোথাও দুই ফুট পর্যন্ত পানি জমেছে। কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার।

বাগেরহাট শহর এবং আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি ঘের ও পুকুরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, ৯১৫টি চিংড়ি ঘের ও ১৭৭টি পুকুর ক্ষতির মুখে পড়েছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ১২ ঘণ্টায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় প্রশাসন মাইকিং করছে। নামার বাজার, দাসপাড়া, শেখপাড়া, বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে গেছে। এতে কৃষিজমির অর্ধেকেরও বেশি অংশ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অঞ্চলে নদীর পানি বেড়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে ভবদহ অঞ্চলের বিল ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও মরিচের ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।