শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫

|১২ ভাদ্র ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২৮ আগস্ট ২০২৫

সীমান্তে গুলি চালানো নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ ডিজিদের প্রকাশ্য মতবিরোধ

সীমান্তে গুলি চালানো নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ ডিজিদের প্রকাশ্য মতবিরোধ
ছবি: সংগৃহীত

সীমান্তে জীবন ঝুঁকির পরিস্থিতিতে পড়লেই কেবল গুলি চালানো হয়—ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর মহাপরিচালক (ডিজি) দালজিৎ সিং চৌধুরীর এমন মন্তব্যে প্রকাশ্যেই দ্বিমত জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। 

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে আয়োজিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এই মতবিরোধ দেখা দেয়।

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও গুলি ছোড়ার বিষয়ে বিএসএফ ডিজি বলেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৫ জন বিএসএফ সদস্য অনুপ্রবেশকারীদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিএসএফ সদস্যরা প্রথমে অনুপ্রবেশকারীদের বাধা দেয়, সতর্ক করে এবং সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে গুলি ছোড়ে। তবে বিজিবি প্রধান তাৎক্ষণিকভাবে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি একজন অল্পবয়সী বাংলাদেশি নাগরিককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ওই শিশুটি আদৌ কতটা নিরাপত্তা হুমকি ছিল?

বিজিবি ডিজি বলেন, সীমান্ত হত্যা ইস্যুতে এবারের সীমান্ত সম্মেলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয় বাহিনী সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার, যৌথ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্তের আশেপাশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সম্মত হয়েছে।

সম্মেলনে পুশ-ব্যাক ও পুশ-ইনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। বিএসএফ ডিজি দাবি করেন, শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদেরই নিয়ম মেনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫৫০ জনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আরও প্রায় ২,৪০০টি কেস প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশনও সহযোগিতা করছে বলে তিনি জানান। তবে, পুশ-ইনের নামে ভারত থেকে রোহিঙ্গা অথবা ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, তাহলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ সহযোগিতা করবে।

চার দিনব্যাপী এই সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয় ২৫ আগস্ট এবং শেষ হয় ২৮ আগস্ট। বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পক্ষের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। অন্যদিকে, বিএসএফ ডিজি দালজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের পাশাপাশি ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ছিলেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিজিবি ডিজি ছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আজই ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত বিষয়: