বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ২৩ জুলাই ২০২৫

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে মাইলস্টোনে কমিটি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে মাইলস্টোনে কমিটি
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার মাইলস্টোনের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য জানানো হয়, যার সত্যতা নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর মো. মনিরুজ্জামান মিয়া।

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২১ জুলাই (সোমবার) দুপুর ১টা ১২ মিনিটে দিয়াবাড়ির স্থায়ী ক্যাম্পাসে মাইলস্টোন স্কুল ভবনে আকস্মিকভাবে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকসহ বহু মানুষ হতাহত হন।

আহত, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের লক্ষ্যে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার, কো-অর্ডিনেটর লুৎফুন্নেসা লোপা, অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মোল্লা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মারুফ বিন জিয়াউর রহমান ও মো. তাসনিম ভূঁইয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৯ জন এবং আহত অবস্থায় ৬৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে প্রথম দিন থেকেই হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে হতাহতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার দিনভর স্কুল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারা ‘নিয়ারলি হান্ড্রেড প্লাস ডেথ’, ‘লাশের নিরাপত্তা চাই’, ‘বিচার নয়, লাশের হিসাব চাই’, ‘সার্ভিং মার্ডার, হাইডিং কাউন্টস’ ইত্যাদি লেখা পোস্টার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করে।

বিক্ষোভ চলাকালে ক্যাম্পাসে যান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ কয়েকজন। তবে শিক্ষার্থীদের ঘেরাওয়ের মুখে তারা প্রায় নয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন এবং সন্ধ্যায় পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে শফিকুল আলম জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো থেকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করছে এবং সেনাবাহিনীও এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের সংখ্যা গোপন করার কোনো প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য নেই।

২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্যোগ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন রাখা কার্যত অসম্ভব।

দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উপদেষ্টারা কলেজ ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। এই কন্ট্রোল রুমে প্রাপ্ত তথ্য রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে আপডেট দেওয়া হবে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদেরও এতে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। প্রেস সচিব আশা প্রকাশ করেন, এই কন্ট্রোল রুম খুব শিগগিরই পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।