বন্দী নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সাবেক সামরিক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাদের হাতে এক ফিলিস্তিনি বন্দীর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর সাবেক সামরিক প্রসিকিউটর মেজর জেনারেল ইয়িফাত তমার–ইয়েরুশালমিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি পুলিশ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানায়, সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে তাঁকে আটক করা হয়।
ভিডিও ফাঁসের পর তমার–ইয়েরুশালমি পদত্যাগ করেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ঘটনাকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
জানা গেছে, রোববার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন তমার–ইয়েরুশালমি, যা নিয়ে আত্মহত্যাচেষ্টার গুঞ্জন ওঠে। তাঁর পদত্যাগপত্রে তিনি স্বীকার করেন, গত বছর তাঁর কার্যালয় থেকেই ভিডিওটি গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর পাঁচ রিজার্ভ সেনাকে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গাভির টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানান, তমার–ইয়েরুশালমিকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো হয়নি।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, তেল আবিবের একটি আদালত বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, আস্থাভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা এবং সরকারি তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনায় সাবেক প্রধান সামরিক প্রসিকিউটর কর্নেল মাতান সলোমেশকেও সোমবার রাতে আটক করা হয় এবং তাঁকেও আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনা রেডিও।
এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, দক্ষিণ ইসরায়েলের সদে তেইমান সামরিক ঘাঁটির ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় তমার–ইয়েরুশালমি পদত্যাগ করেছেন।
মামলার সূত্রপাত ২০২৪ সালের আগস্টে, যখন ইসরায়েলের চ্যানেল–১২ সদে তেইমান ঘাঁটির একটি নজরদারি ফুটেজ প্রকাশ করে। গাজা যুদ্ধ চলাকালে এই ঘাঁটিতে আটক ফিলিস্তিনিদের রাখা হয়েছিল। ফুটেজে দেখা যায়, সেনারা এক বন্দীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, যদিও দৃশ্যটি সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান ছিল না কারণ সৈন্যরা ঢাল ব্যবহার করে তা আড়াল করেছিল।
ভিডিওটি পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী, এমনকি ইসরায়েলের ভেতরেও বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, পাঁচ রিজার্ভ সেনাকে সদে তেইমান ঘাঁটিতে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তারা এক বন্দীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়, যার ফলে তাঁর শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হয়।
সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের সময় বন্দীর পাঁজরের হাড় ফেটে যায়, ফুসফুসে ছিদ্র হয় এবং মলদ্বার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলের সদে তেইমান ঘাঁটিতে তল্লাশির সময়।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই ভিডিও ফাঁস ইসরায়েলের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ঘটনা। এটি আমাদের রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিতে বড় আঘাত হেনেছে।’



























