মেলিসার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত তিন দেশ: ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে মৃত্যু কমপক্ষে ৩০
প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’য় তছনছ হয়ে গেছে ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন দেশ—জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবা। প্রাণহানি ছাড়াও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। পুরো এলাকাজুড়ে এখন বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা ভেঙে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি ও রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কেবল হাইতিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। দেশটির উপকূলীয় শহর পেটিট-গোয়াভেতে নদীর পানি উপচে বন্যায় ভেসে গেছে একাধিক বসতি। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু রয়েছে। ১২ জন নিখোঁজ বলে জানিয়েছে হাইতির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।
অন্যদিকে, সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জ্যামাইকায়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানিয়েছেন, এখনো ৭৭ শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, এবং বহু অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি বলেন, 'জ্যামাইকার এমন অবকাঠামো নেই যা মেলিসার মতো দুর্যোগ সহ্য করতে পারে।'
জ্যামাইকার সরকার জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে। তবে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, সেখানে ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা রয়ে গেছে, যা আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হারিকেন আঘাত হানার সময় প্রায় ২৫ হাজার বিদেশি পর্যটক দ্বীপদেশটিতে অবস্থান করছিলেন। উদ্ধার তৎপরতা শুরু হলেও ধীরগতির কারণে অনেক এলাকায় এখনো আটকা পড়ে আছেন শত শত মানুষ।
এদিকে, কিউবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেলিসার তাণ্ডবে। যদিও সরকার আগেভাগেই লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিউবার পাঁচটি প্রদেশ—সান্তিয়াগো, গ্রানমা, হলগুইন, গুয়ান্তানামো এবং লাস টুনাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ লাইন, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও সড়ক যোগাযোগ। কলা, কফি ও কাসাভা বাগানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে বার্বাডোজ থেকে জ্যামাইকায় প্রায় দুই হাজার ত্রাণ সরঞ্জাম পাঠানো হবে। সংস্থাটি হাইতি ও কিউবাকেও সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মেলিসা অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করেছে।
সতর্ক বার্তা দিয়ে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, 'শুধু একটি ঝড় নয়, পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের বার্তা।'
সদ্য সংবাদ/এমটি



























