‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে আসামে তোলপাড়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে ভারতের আসামে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসের এক সভায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গান পরিবেশনের ঘটনায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সোমবার (২৭ অক্টোবর) আসামের শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেস সেবা দলের এক সভায় কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা বিদ্যু ভূষণ দাস উপস্থিত কর্মীদের সামনে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন করেন। এরপরই রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক তোলপাড় শুরু হয়।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘটনাকে ‘জাতীয় অনুভূতির প্রতি গুরুতর অপমান’ আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, রবীন্দ্রনাথের এই গানটি এখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং এটি গাওয়ার পেছনে 'গ্রেটার বাংলাদেশ' তত্ত্বকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, 'এই ঘটনা শুধু অসমের নয়, ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপরই আঘাত। পাকিস্তান-সমর্থিত কিছু গোষ্ঠী গ্রেটার বাংলাদেশ ধারণা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।'
উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের হাতে পাকিস্তানের জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে দেওয়া একটি বইয়ের প্রচ্ছদের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে একটি বিমূর্ত মানচিত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অংশ দেখা গেছে বলে দাবি করেন শর্মা।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে।
লোকসভার কংগ্রেস উপনেতা গৌরব গগৈ বলেন, 'আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার অনেক আগে লেখা হয়েছিল। এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের প্রতীক, বিভেদের নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বিজেপি একদিকে বাঙালি সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করে, আবার অন্যদিকে নির্বাচনী স্বার্থে বাঙালি ভাষাভাষী ভোটারদের ব্যবহার করে। আজ তাদের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করছে তারা রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞ।'
আসামের এই ঘটনাকে ঘিরে এখনো তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। অনেকে বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে দেখা সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতারই প্রতিফলন।
সদ্য সংবাদ/এমটি



























