লোহিত সাগরে হুথি হামলায় জাহাজ ডুবে, নিহত ৩

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলায় লোহিত সাগরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। ইউরোপীয় নৌ মিশনের তথ্যে, হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং ছয়জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) জানায়, সোমবার গ্রিস পরিচালিত ও লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ‘ইটারনিটি সি’ নামের জাহাজটি হামলার শিকার হয়। জাহাজটিতে ২৫ জন ক্রু ছিল ।
ছোট একটি নৌকা থেকে ছোড়া রকেটচালিত গ্রেনেডে জাহাজটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরান-সমর্থিত হুথিরা দাবি করে, জাহাজটি ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল বলেই হামলা চালানো হয়েছে। তারা আরও জানায়, কিছু ক্রু সদস্যকে “নিরাপদ স্থানে” নেওয়া হয়েছে, যদিও মার্কিন দূতাবাস অভিযোগ করেছে, হুথিরা “জীবিত অনেক ক্রু সদস্যকে অপহরণ করেছে”।
ফিলিপাইনের সরকার জানায়, জাহাজটির ক্রুদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন তাদের নাগরিক। একজন রাশিয়ান নাবিক গুরুতর আহত হয়েছেন এবং একটি পা হারিয়েছেন। এছাড়া একজন ভারতীয়সহ আরও ১৯ জন এখনো নিখোঁজ।
জাহাজে হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে হুথিরা, যেখানে সশস্ত্র ব্যক্তি ও ধারাবাহিক বিস্ফোরণের চিত্র দেখা যায়।
এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে ‘ম্যাজিক সি’ নামের আরেকটি গ্রিক-পরিচালিত জাহাজেও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুথিরা। এতে ২২ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে চারটি জাহাজ ডুবে গেছে, পাঁচটি জব্দ করা হয়েছে, এবং অন্তত সাতজন নাবিক নিহত হয়েছেন। হুথিরা দাবি করে, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালাচ্ছে।
হুথিদের এই ধারাবাহিক হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যারা বলছে, এই হামলা ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের জন্য হুমকি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। যদিও মে মাসে হুথি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তবে হুথিরা জানায়, এতে ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু না করার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (আইএমও) এর মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিঙ্গুয়েজ সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও নৌ চলাচলের স্বাধীনতার লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই সহিংসতার প্রধান ভুক্তভোগী হচ্ছে নিরীহ নাবিক ও উপকূলীয় জনগণ।’
নিখোঁজ নাবিকদের উদ্ধারে এখনো তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা ডায়াপ্লাস।