নোবেল বিজয়ীদের সোনালি-কালো প্রতিকৃতির রহস্য কি?
কয়েক দিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছে ২০২৫ সালের নোবেলজয়ীদের নাম। প্রতি বছর যেমন নাম ঘোষণার পর আলোচনায় আসে বিজয়ীরা, তেমনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নজর কাড়ছে আরেকটি বিষয় তাদের সোনালি-কালো প্রতিকৃতি। নোবেল কমিটি সাধারণ রঙিন ছবি বা প্রচলিত পোর্ট্রেটের বদলে এই বিশেষ ধরনের প্রতিকৃতি ব্যবহার করছে, যা এখন নোবেল ঘোষণার এক অনন্য পরিচয়ে পরিণত হয়েছে।
ডিজিটাল যুগে যখন সুপার পিক্সেলের ক্যামেরা ও রঙের অগণিত বিকল্প হাতের নাগালে, তখন প্রশ্ন জাগে এই সোনালি-কালো প্রতিকৃতি কেন, আর কে আঁকেন?
এই প্রতিকৃতির পেছনে রয়েছেন সুইডিশ শিল্পী নিকলাস এলমেহেড। তিনি খুব পরিচিত নাম না হলেও নোবেল কমিটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট তাঁকে আলোচনায় এনেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, এই অনন্য রঙের প্রতিকৃতিগুলোর স্রষ্টা তিনিই।
নিজের ওয়েবসাইটে নিকলাস জানিয়েছেন, তিনি কেন কেবল গাঢ় কালো রেখা আর সোনালি রঙ ব্যবহার করেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই প্রতিকৃতিগুলোর মূল ধারণা হলো ব্রেকিং নিউজের মতো এক শক্তিশালী ও আলাদা ভিজ্যুয়াল অভিব্যক্তি তৈরি করা’
তিনি জানান, ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নোবেল ঘোষণার সময়কার ভিজ্যুয়ালে সোনালি রঙকে প্রধান হিসেবে রাখা হবে। তবে সেটা যেন শুধু প্রতীকী না হয়, বরং টেক্সচারের মাধ্যমে গভীরতা প্রকাশ করে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি গোল্ড ফয়েল ব্যবহার শুরু করেন। এই অতিপাতলা ধাতব আস্তরণ বিশেষ আঠা দিয়ে ছবিতে বসানো হয়। সাদা পটভূমিতে কালো রেখা ও সোনালি আভা প্রতিকৃতিগুলোকে দেয় অনন্য শক্তি ও মর্যাদার ছোঁয়া।
নোবেল প্রতিকৃতি আঁকা শুরু করার গল্পও জানিয়েছেন নিকলাস। ২০১২ সালে তিনি নোবেল মিডিয়ার আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। সে বছর ঘোষণার সময় কিছু বিজয়ীর ছবি না পেয়ে তিনি দ্রুত কালো মার্কারে স্কেচ আঁকেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেই স্কেচগুলো ব্যবহার হয়। পরে ২০১৪ সালে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল বিজয়ীদের প্রতিকৃতির নির্দিষ্ট ভিজ্যুয়াল স্টাইল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখনই তিনি কালো রেখার সঙ্গে নীল ও হলুদ আভা মিলিয়ে একটি স্বতন্ত্র শৈলী গড়ে তোলেন।
কোনো নোবেলজয়ী কি তাঁদের প্রতিকৃতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, জানতে চাইলে নিকলাস বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কেউ কিছু বলেননি। সম্ভবত ঘোষণার পর তাঁরা এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে এসব ভাবার সময় পান না।’
নোবেল প্রতিকৃতি ছাড়াও নিকলাস এলমেহেড নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে কাজ করেন এবং বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরি করেন। এমনকি সুইডিশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনও করেন তিনি।
প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতির ছয়টি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকে পান এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার।
নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন ধনাঢ্য সুইডিশ রসায়নবিদ ও উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেল। মৃত্যুর আগে উইলে তিনি ঘোষণা করেন, মানবকল্যাণে অবদান রাখা ব্যক্তিদের মধ্যেই তাঁর সম্পদের বেশিরভাগ অংশ বণ্টন করা হবে সেই ইচ্ছাতেই জন্ম নেয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার।



























