গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা; ইসরায়েলের হাতে গ্রেটা থুনবার্গসহ বহু কর্মী আটক
গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এসময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ডজনখানেক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটককৃত জাহাজগুলোকে একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে যারা নিজ দেশে ফিরতে রাজি, তাদের ফেরত পাঠানো হবে; আর যারা অস্বীকৃতি জানাবে, তাদের কারাগারে পাঠানো হবে। খবর বিবিসি।
জাহাজগুলো আন্তর্জাতিক জলসীমায়, গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আটক করা হয়। আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে এই এলাকায় ইসরায়েলের কোনো বৈধ কর্তৃত্ব নেই। তবে তাদের দাবি, ফ্লোটিলার জাহাজগুলো যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং বৈধ নৌ অবরোধ ভঙ্গ করছিল।
অন্যদিকে ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ এই আটককে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি কোনো আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয়, বরং ‘মরিয়া ও পরিকল্পিত হামলা।’ তাদের অভিযোগ, একটি জাহাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে এবং আরও কয়েকটিকে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে ওই সব দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে, যাদের পতাকা জাহাজগুলোতে উড়ছিল। তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সমালোচনা করে বলেন, ফ্লোটিলার প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনি জনগণের কোনো কাজে আসবে না।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক প্রক্রিয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গ্রেটা থুনবার্গ নৌকার ডেকে বসে আছেন এবং সেনারা তাকে পানি ও জ্যাকেট দিচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, আটক কর্মীদের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে এবং ‘গ্রেটা ও তার সহযোগীরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’
এ ঘটনায় গ্রিস, ইতালি, জার্মানি, তিউনিসিয়া ও তুরস্কসহ বহু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তান, বলিভিয়া ও মালয়েশিয়াও ইসরায়েলের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ইতালিতে শ্রমিক সংগঠন সিজিআইএল শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে গাজায় সংহতি জানাতে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভল্কার তুর্ক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে অবরোধ প্রত্যাহার করে জরুরি সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, আটক জাহাজে থাকা তাদের নাগরিকদের বিষয়ে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তুরস্ক এই আটককে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
ঘটনার পর কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করেন এবং এই পদক্ষেপকে নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও বাতিল করেছে।
আয়ারল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস জানান, আটক হওয়া অন্তত সাতজন আইরিশ নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন সিন ফেইন দলের সিনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুসও। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।
স্পেন থেকে এক মাস আগে যাত্রা শুরু করা ফ্লোটিলাটিতে ছিল ৪০টিরও বেশি জাহাজ এবং প্রায় ৫০০ যাত্রী। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় সংসদের সদস্য, আইনজীবী, সাংবাদিক ও কর্মী ছিলেন। লক্ষ্য ছিল সরাসরি গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।
এর আগে জুন ও জুলাইতেও গাজায় ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা ব্যর্থ করেছিল ইসরায়েল। এবারও ফ্লোটিলাকে ‘সেলফি ইয়ট’ আখ্যা দিয়ে ব্যঙ্গ করেছে দেশটির সরকার। তবে গ্রেটা থুনবার্গ বিবিসিকে বলেন, ‘কেউ প্রচারের জন্য নিজের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলবে না।’
জাতিসংঘ সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং এর পেছনে ইসরায়েলের অবরোধ নীতি দায়ী। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন।



























