আগস্টে নির্বাচন
ছাত্র সংগঠনগুলোর লুকোচুরি ডাকসুর প্যানেল নিয়ে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্যমতে, আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়েই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে। এরপর তফসিল নিয়ে আলোচনা ও তা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গত ১৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবাই এখন তাকিয়ে আছেন নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার দিকে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো সংগঠন তাদের প্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি, তবে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
প্যানেল চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে কৌশল, দরকষাকষি ও গোপন আলোচনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে—এবারের ডাকসু নির্বাচনে কেমন হবে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রার্থী তালিকা?
৫ আগস্টের পর থেকে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান, হলে হলে শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সংগঠনের অনেক নেতা এবার সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
তবে সংগঠনের বাইরে থেকেও কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা কয়েকজন নেতাকে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামি, কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান।
তালিকায় আরও আছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম, ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহ-সমন্বয়ক এবি জোবায়ের এবং মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মাদ।
এদিকে ছাত্র সংগঠনগুলো এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা না করলেও নিয়মিত বৈঠক ও প্রস্তুতি চলছে। তবে ছাত্রদলের প্যানেল ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা না থাকায় অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিলে অধ্যয়নরত ছাত্রদল নেতারা প্রার্থী হতে পারছেন। গুঞ্জন রয়েছে, ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তবে তরুণ ও অভিজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এখনো প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে সাহস বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের কার্যক্রম নির্বাচনমুখী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গ্রহণযোগ্য সমাধান ও সংস্কারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন তারা। সাধারণ সম্পাদক শিপন বলেন, পরিবেশের উপর নির্ভর করছে প্যানেল কেমন হবে, তাই এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না।
ছাত্রশিবির তাদের প্যানেল ‘ইনক্লুসিভ’ করার কথা জানিয়েছে। আলোচনায় রয়েছে ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম, যাকে ভিপি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া এস এম ফরহাদ ও মহিউদ্দিন খান জিএস ও এজিএস পদের আলোচনায় রয়েছেন। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পরই তাদের প্যানেল প্রকাশ পাবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদ ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ নামে একটি অংশগ্রহণমূলক প্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সময়ে যারা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন, তারাই প্যানেলে অগ্রাধিকার পাবেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে ভিপি ও জিএস পদের জন্য প্রাথমিকভাবে আবু বাকের মজুমদার ও আব্দুল কাদেরের নাম আলোচনায় এসেছে। তবে এখনো প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মহির আলম।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট থেকেও একটি প্যানেল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, সমমনা ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। এছাড়া কয়েকটি ইসলামী ছাত্র সংগঠন জোট গঠনের পরিকল্পনাও করছে বলে জানা গেছে।
তফসিল ঘোষণার পর দৃশ্যমান হবে কোন সংগঠন কেমন প্যানেল নিয়ে মাঠে নামে এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা কাদের প্রতি বেশি—তা নির্ধারণ করবে ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব।