বাহার ফিরেছেন একা, হারিয়েছেন মা-স্ত্রী-সন্তানসহ ৭ জন

দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরছিলেন বাহার উদ্দিন। হৃদয়ে ছিল প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলনের উচ্ছ্বাস, চোখে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছিলেন—‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি।
নোয়াখালীর পথে যাত্রারত অবস্থায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে প্রাণ হারালেন বাহারের মা, স্ত্রী, দুই বছরের কন্যা, নানী, ভাবি ও দুই ভাতিজি। বেঁচে গেলেন একমাত্র বাহার—অসহায়, বিধ্বস্ত, নিঃসঙ্গ।
বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাহারসহ পরিবারের সাত সদস্য একটি মাইক্রোবাসে করে রওনা দেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার উদ্দেশ্যে। পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাসটির চালক ঘুমিয়ে পড়েন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি পাশের খালে পড়ে যায়।
স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন—বাহারের মা মুরশিদা বেগম, স্ত্রী কবিতা আক্তার, কন্যা মিম (২), নানী ফয়জুন নেছা, ভাবি লাবনী আক্তার, ভাতিজি রেশমি ও লামিয়া।
দুর্ঘটনার পর বাহার নিজে প্রাণে বাঁচলেও চোখের সামনে দেখতে হয় তার পরিবারের সাতজনের মৃত্যুক্রন্দন। তিনি বারবার বলছিলেন—
“তোর জন্য এসেছিলাম মা, তুই কেন লাশ হয়ে এলি…!”
নিহত দুই ভাতিজির স্কুলব্যাগে ছিল সদ্য কেনা নতুন বই। বাড়ির এক কোণে পড়ে আছে সেই ব্যাগ—নীরব, নিস্তব্ধ। কেউ আর ছুঁয়ে দেখে না।
একসঙ্গে সাতটি জানাজা, ছয়জনকে একই কবরস্থানে দাফন, আর নানী ফয়জুন নেছাকে চিরশান্তির ঘুমে শুইয়ে দেওয়া হয় চর মোহাম্মদপুরে।
পুলিশ জানিয়েছে, চালক অসতর্কভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং দুর্ঘটনার সময় ঘুমিয়ে পড়েন। তার এই সামান্য গাফিলতিই কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারের সাতটি প্রাণ।
প্রশ্ন উঠছে—এই কি আমাদের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা? একজনের ঘুম কীভাবে শেষ করে দিতে পারে এতগুলো প্রাণের স্বপ্ন?
বাহার উদ্দিন এখন কেবল বেঁচে আছেন, যেন নিঃশ্বাস নিতে বাধ্য এক মানুষ। তার স্বপ্ন ঠিকই পৌঁছেছে বাড়ি, কিন্তু সেই বাড়ি এখন শুধুই নীরব কান্নায় ডুবে থাকা এক স্মৃতির প্রতিচ্ছবি।