‘আমার সন্তানের আত্মত্যাগ দেশের পরিবর্তনের পথ উন্মোচন করেছে’

“আমার সন্তানের আত্মত্যাগ দেশের পরিবর্তনের পথ উন্মোচন করেছে। আজকের দিনটি একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে বেদনাদায়ক। কারণ ২০২৪ সালের এই দিনে আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। তবে তার জীবন উৎসর্গের বিনিময়ে আজ দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত”—এমন মন্তব্য করেন জুলাই শহীদ আসির ইনতিশারুলের পিতা আ. হ. ম. এনামুল হক লিটন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে ‘আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও এক শহীদ মো. হৃদয় ইসলামের মা মাজেদা খাতুন, যিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি আমার ছেলের বিচার এখনো পাইনি।” এ সময় উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, জুলাই অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এইচ এম কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “যত বড় ত্যাগ, তত বড় অর্জন। ৭১, ৯০, এবং ২৪—এই তিনটি বড় আন্দোলনের পেছনে ছিল আত্মত্যাগ। আমি নিজেও ৯০ সালে কাফিউ ভেঙে মিছিলে গিয়েছিলাম, আবার ২০২৪ সালের জুলাইতেও গিয়েছি।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের চেতনা যদি কেউ অস্বীকার করে, তাহলে জনগণ তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে। আমরা চাই জুলাই ২০২৪-এর ইতিহাস প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হোক।”
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেন, “জুলাই ২৪ আমরা ভুলে যেতে পারি না। আমি নিজেও অনেক ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণ করে রেখেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো এত বৈচিত্র্যময় ফ্যাসিস্ট আর কেউ নেই। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় এদেশের শাসন বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। আজকের অর্জন এসেছে অনেক কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে। এটি ধরে রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে শুরুতে বিজয় মিছিল, জাতীয় সংগীত, এক মিনিট নিরবতা পালন এবং জুলাই শহীদদের স্মরণে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই চব্বিশ’ শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। শেষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।