ইবিতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল ক্যাম্পাস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাঁতার জানলেও পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হওয়াকে রহস্যজনক মনে করছেন স্বজন ও সহপাঠীরা। মৃত্যুর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে স্লোগান দেন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তারা দাবি করেন, মৃত্যুর খবর প্রশাসনকে জানানোর প্রায় এক ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এত বিলম্ব কেন—সে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মরদেহ তোলার আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছেনি। পরে বাধ্য হয়ে তারা একটি ভ্যানে করে সাজিদকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এছাড়া মরদেহ শনাক্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা বা হল প্রভোস্টের উপস্থিতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়েও শিক্ষার্থীদের তীব্র অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা অচল। এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে বললেও তারা বরাবরই বাজেট ঘাটতির কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, হলের এন্ট্রি ও এক্সিট মনিটরিং ব্যবস্থা চালু, নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক দাবি উত্থাপন করেন। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভে ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।
এর আগে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে সাজিদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন। এছাড়া শুক্রবার রাতে শাখা ছাত্রশিবির টর্চলাইট মিছিল করে মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবি জানায়।
ঘটনার পর ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদের মরদেহ ভেসে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সাজিদের মৃত্যু ঘিরে এখনও অসংখ্য প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, না কি এর পেছনে রয়েছে কোনো অজানা ঘটনা?