রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

|২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৯ জুলাই ২০২৫

জামায়াতের প্রথম সমাবেশে বিএনপিসহ সব দলকে আমন্ত্রণ 

জামায়াতের প্রথম সমাবেশে বিএনপিসহ সব দলকে আমন্ত্রণ 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নানা মতবিরোধ ও বিতর্ক চলছে, ঠিক সেই সময় ঢাকায় জাতীয় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ ঘিরে দলটির পক্ষ থেকে আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। উল্লেখযোগ্য বিষয়, জামায়াত এর আগে কখনো এই মাঠে দলীয়ভাবে সমাবেশ করেনি।

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৭ দফা দাবিকে সামনে রেখে আয়োজিত এই সমাবেশে স্মরণীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই নেয়া হয়েছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। অনেকেই মাঠেই মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ছোট ছোট মিছিল আকারে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। কারো হাতে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা, কারো গায়ে পাঞ্জাবি কিংবা স্লোগানসম্বলিত সাদা গেঞ্জি—‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, চাঁদাবাজের বিপক্ষে হোক’।

দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সমাবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যানজট ও জনভোগান্তি কমাতে পরিকল্পিতভাবে শনিবারের দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীজুড়ে ২০টি পয়েন্টে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন, যাতে সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আগতদের সহায়তা করা যায়।

তিনি আরও জানান, সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সভাপতিত্ব করবেন এবং তার বক্তব্যে থাকবে একটি বিশেষ বার্তা, যা আগেভাগে প্রকাশ করা হবে না। দলের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হবে—গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, শহীদ-আহত পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে গঠিত হয়েছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি ও ৮টি উপকমিটি। রাজধানীসহ দেশজুড়ে পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট এবং ভ্রাম্যমাণ প্রচারের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে। সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মাধ্যমেও জনসাধারণকে বার্তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছে দলটি।

নেতাকর্মীদের জন্য রাজধানীর ১৫টি স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। থাকবে ২০টি পয়েন্টে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য ১৫টি মেডিকেল বুথে দুইজন করে এমবিবিএস চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সমাবেশের প্রচার ও তথ্যভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে একটি আইটি টিম, যারা ড্রোন ও ক্যামেরা ব্যবহারে ভিডিও ধারণ এবং এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার করবে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমেও লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে দলটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ও লিখিত অনুরোধ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে দলের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, তাতে কিছুটা বাকস্বাধীনতা ফিরে পাওয়া গেছে, আর সেই সুযোগেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামপন্থি ও দেশপ্রেমিক নেতাদের এই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।

জামায়াত মনে করছে, এই সমাবেশ হবে নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক মোড় ঘোরানোর একটি বড় মুহূর্ত। দলটির লক্ষ্য—নীরবে শক্তি প্রদর্শন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব তৈরি করা।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, এই সমাবেশ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে জনমত গঠনের প্রয়াস। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর রাজধানীতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল বড় সমাবেশ করলেও জামায়াত এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে সমাবেশ করছে।

সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে উদ্যান পরিদর্শনকালে জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মহাসমাবেশের বার্তা শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পৌঁছে যাবে।

দলটি বলছে, জাতীয় কল্যাণের স্বার্থে এই আয়োজন। জনগণের স্বার্থে কাজ করছে তারা। সমাবেশকে ঘিরে নগরবাসীর সাময়িক দুর্ভোগের জন্য দলটি আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে।