রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

|৩০ কার্তিক ১৪৩২

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৭ অক্টোবর ২০২৫

চীন থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ, ব্যয় ২৭ হাজার কোটি টাকা

চীন থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ, ব্যয় ২৭ হাজার কোটি টাকা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্তের পথে। এই ৪.৫ জেনারেশনের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ পুরো প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিটি সরকারে সরকারে (জিটুজি) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হতে পারে। চলতি ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের হাতে আসা নথিপত্র অনুযায়ী, যুদ্ধবিমানগুলোর দাম ও অন্যান্য খরচ ১০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।

চীনের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত জে-১০সি মডেলের রপ্তানি সংস্করণই হচ্ছে জে-১০ সিই। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দেয়া প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে ২০টি বিমানের দাম দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রপাতি, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে আরও ৮২ কোটি ডলার যোগ হবে। এছাড়া বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন ও পূর্ত খাতে অতিরিক্ত ব্যয় মিলিয়ে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার।

গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় এই যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। চীন সে সময় প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। এরপর এপ্রিল মাসে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি বর্তমানে খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা, দরকষাকষি ও চূড়ান্ত শর্তাবলী নির্ধারণের কাজ করছে।

চুক্তিপত্রে যুদ্ধবিমানের সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য সহায়তা ব্যবস্থার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিমানগুলো বাংলাদেশে পৌঁছালে তা বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল। এই ক্রয় সেই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “বর্তমানে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ সংবেদনশীল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টানাপোড়েনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

চীনের নিজস্ব বাইই অ্যারোবেটিক টিম ইতোমধ্যেই জে-১০সি মডেল ব্যবহার করছে। উন্নত ইঞ্জিন, রাডার ও অস্ত্রসজ্জার কারণে এই যুদ্ধবিমান চীনের অন্যতম আধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার হিসেবে পরিচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ২১২টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এর মধ্যে ৩৬টি চীনা তৈরি এফ-৭ এবং ৮টি রুশ নির্মিত মিগ-২৯বি ও ইয়াক-১৩০। নতুন জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান যুক্ত হলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে বলে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মত।

সর্বশেষ