বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ১৫:১২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের উস্কানি আসে ইনুর থেকেই

হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের উস্কানি আসে ইনুর থেকেই
ছবি: সংগৃহীত

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিয়েছেন। সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় হাসানুল হক ইনুকে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ এক সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার আরও দুই দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের যুক্তি শোনার পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৪ অক্টোবরের তারিখ নির্ধারণ করে।

কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ৩৯ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে মোট আটটি অভিযোগ আনা হয় এবং সাক্ষী রাখা হয় ২০ জনকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ অভিযোগ গ্রহণ করে। অন্য দুই বিচারপতি ছিলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম আদালতে অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, জাসদের সভাপতি হিসেবে ইনু আন্দোলন দমন ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ভারতের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। অভিযোগে বলা হয়, তার পরামর্শেই শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন।

গত বছরের ১৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ইনু উপস্থিত থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন এবং গুলি চালানোর সিদ্ধান্তে সম্পৃক্ত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি শুধু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তাই করেননি, বরং নিজ জেলার পুলিশকেও আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, সেনা নামানো, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং কারফিউ জারির মতো পদক্ষেপে পরামর্শ ও প্ররোচনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে তিনি আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং সরকারের পদক্ষেপকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২৯ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সভায় তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারের কর্মকাণ্ড বৈধতা পায়। ৪ আগস্ট আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি ও গুলি চালানোর পদক্ষেপ অনুমোদন করেন তিনি এবং এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সমন্বয় করেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু ও মাহবুবউল আলম হানিফের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার পর কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। নিহতরা হলেন আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, বাবলু ফরাজী ও ইউসুফ শেখ।

এরপর গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন এবং একাধিক মামলার আসামি।
 

সর্বশেষ