রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

|৩০ কার্তিক ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২০ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪১, ২০ আগস্ট ২০২৫

জুলাইযোদ্ধা আশরাফুলকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ, চাকরি থেকে বঞ্চিত

জুলাইযোদ্ধা আশরাফুলকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ, চাকরি থেকে বঞ্চিত
জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নিচ্ছেন তুষার। ছবি: সংগৃহীত

প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের জুনিয়র অফিসার (গ্রেড-১০) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তুষার। ৬৭ জন প্রার্থীর তালিকায় সবার ওপরে ছিল তার রোল নম্বর। কিন্তু নিয়োগপত্রের শেষ ধাপে গিয়ে বাদ পড়েন তিনি।

আশরাফুলের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ১৫ জানুয়ারি ফলাফল প্রকাশের পর ২২ জুলাই নিয়োগপত্র ইস্যু হলেও সেটি তার হাতে পৌঁছায়নি। অন্যরা ১২ আগস্ট যোগদান করলেও তিনি তা করতে পারেননি।

করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইঙ্গিত দেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য থাকতে পারে। কেউ কেউ ধারণা দেন, প্রতিবেদনে হয়তো তাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে আশরাফুল এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার জীবনে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই। বরং শেখ হাসিনার সময়কালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে ছাত্রলীগ ও পুলিশের দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ডাকসু আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি অংশগ্রহণের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

আশরাফুল আরও জানান, আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও এর আগের সময়ে তিনি সরকারি চাকরির তিনটি নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে যোগ না দিলেও তখন কোনো সমস্যা হয়নি। তার অভিযোগ, ‘নতুন বাংলাদেশে এসে উল্টো বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।’

তিনি দাবি করেন, এ ঘটনার কারণে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে বাবা–মায়ের অসুস্থতা ও পারিবারিক দায়িত্ব সামলাতে চাকরিটি তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের খরচ চালাতে তিনি টিউশনি ও ফ্রিল্যান্সিং করছেন, পাশাপাশি গ্রামের বাড়ির কৃষিজমি থেকেও কিছু অর্থ আসে।

সাধারণ বীমা করপোরেশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য থাকতে পারে এবং সেগুলো সাধারণত বিবেচনায় নেওয়া হয়।

তুষার ইতোমধ্যে করপোরেশনের এমডি, জিএম ও ডিজিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। ৭ আগস্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন পুনরায় করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আবেদন করেন। এর আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানও করপোরেশনকে একটি চিঠি দিয়ে নিয়োগপত্র বিলম্বের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আহ্বান জানান।

করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, বোর্ড সভায় আলোচনা ছাড়া এ নিয়ে মন্তব্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকার চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের বিধান বাতিল করে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবুও আশরাফুলের অভিজ্ঞতা বলছে, বাস্তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রভাব এখনও কার্যকর রয়েছে।

ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে আশরাফুল লিখেছেন, ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনাগুলো গুনে শেষ করা যাবে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘যে মানুষ এসব আন্দোলনে ছিল, তাকে আওয়ামী ট্যাগ দিয়ে নিয়োগপত্র আটকে দেওয়া এটা কীভাবে সম্ভব?’ সূত্র: ইত্তেফাক অনলাইন

সর্বশেষ