রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

|২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ১১ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেনে অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র, অর্থ পরিশোধ করবে ন্যাটো: ট্রাম্প

ইউক্রেনে অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র, অর্থ পরিশোধ করবে ন্যাটো: ট্রাম্প
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র, তবে এর অর্থ পরিশোধ করবে ন্যাটো। এছাড়া রাশিয়া ইস্যুতে আগামী সোমবার (১৪ জুলাই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান তিনি। রুশ আগ্রাসন বন্ধে অগ্রগতি না হওয়ায় সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি হতাশাও প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অস্ত্র সরবরাহ সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা বলেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে অস্ত্র পাঠাবে এবং ন্যাটো শতভাগ অর্থ পরিশোধ করবে। এসব অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে সরবরাহ করা হবে ন্যাটোর মাধ্যমেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যা করছি, তা হলো- আমরা অস্ত্র পাঠাচ্ছি ন্যাটোতে, আর ন্যাটো ওই অস্ত্রের সম্পূর্ণ খরচ বহন করছে। এরপর ন্যাটো ইউক্রেনকে সেই অস্ত্র সরবরাহ করবে।’

ক্ষমতায় ফেরার পর এই প্রথম ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্টিয়াল বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রেসিডেন্ট ড্রডাউন অথরিটি ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডার থেকে নির্বাচন করা অস্ত্র কিয়েভে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই ক্ষমতা জরুরি পরিস্থিতিতে মিত্রদের সহায়তায় সরাসরি মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের অনুমতি দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্যাকেজের মূল্য হতে পারে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার।

গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন প্যাকেজে প্রতিরক্ষামূলক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও মাঝারি পাল্লার আক্রমণাত্মক রকেট থাকতে পারে। তবে ঠিক কোন অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

ট্রাম্পের দল এখন পর্যন্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুমোদিত অস্ত্রগুলোই ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। বাইডেন ছিলেন ইউক্রেনের শক্তিশালী সমর্থক। তবে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ট্রাম্পের শাসনামলে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং কখনো কখনো তিনি ইউক্রেন সহায়তায় মার্কিন ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন, আবার রাশিয়ার প্রতি নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে কিয়েভের প্রতি সমর্থন ও পুতিনের প্রতি হতাশাও প্রকাশ করেছেন একাধিকবার।

ইউক্রেনের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি 

ইতালির রোমে ইউক্রেন পুনর্গঠন বিষয়ক এক সম্মেলনের আগে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে কিয়েভসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সময় রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করে পুনর্গঠন কাজ এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মিত্রদের কাছে অস্ত্র, যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং বিনিয়োগের আহ্বানও জানান।

সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, অংশগ্রহণকারীরা ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ইউরো (১২ বিলিয়ন ডলার) অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউরোপীয় কমিশনও ২.৩ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ৫০ মিনিটের আলোচনার পর রুবিও বলেন, ‘এটি ছিল একটি খোলামেলা কথোপকথন। এখন আমাদের দেখতে হবে, এই সংঘাত কীভাবে শেষ হতে পারে, তার একটি রোডম্যাপ।’ ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সিনেটের সঙ্গে আলোচনা করছে বলেও জানান তিনি।

মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা একটি বাস্তবসম্মত ও খোলামেলা মতবিনিময় করেছে।

জেলেনস্কি জানান, বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় ৪০০টি ড্রোন ও ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার বেশির ভাগই কিয়েভকে লক্ষ্য করে। বিস্ফোরণে শহরের বিভিন্ন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জানালার কাচ ভেঙে পড়ে, ভবনের সামনের অংশ ধসে পড়ে এবং গাড়িগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

কিয়েভের বাসিন্দা ক্যারিনা ভলফ বলেন, ‘এটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম। কারণ এটি প্রতিরাতে ঘটে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে।’

জাতীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, একদিন আগেই রাশিয়া ইউক্রেনে রেকর্ড ৭২৮টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছিল। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও কিছু ড্রোন লক্ষ্যভেদ করে ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।