বিআরটিএ যেনো সোনার ডিম পারা হাঁস, দালাল থেকে কোটি টাকার মালিক

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএ যেনো সোনার ডিম পারা হাঁস। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির আঙিনায় ঘুরে বেড়ানো দালালদের কাছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও অনলাইন পেমেন্ট করে দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দালালরা। গড়ে তুলছেন অঢেল সম্পদ। এসব কাজে আবার সহায়তা করছেন বিআরটিএ’র কিছু অসাদু কর্মকর্তা।
এদের একজন হারুন অর রশিদ রুবেল। বিআরটিএ-এর দালল থেকে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। গড়েছেন নিজের ও স্ত্রীর নামে একাধিক সম্পদ।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় গাড়ির মালিকানা বদল, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এসব অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন ফ্ল্যাট, গাড়ি, দোকানসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
জানা যায়, রুবেলের বাবা অহিদুর রহমান তালুকদার ছিলেন একজন দিনমজুর। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রুবেল ছিলেন সবার বড়। ২০১১ সালে ঢাকায় এসে কাজ নেন মিরপুর বিআরটিএ-তে। মেট্রো সার্কেল-১ সহকারী পরিচালক ( রেজিস্ট্রেশন) জামাল উদ্দিন বহিরাগত অফিস পিয়নের দায়িত্ব দেন তাকে। যার কাজ ছিলো চা এবং ফাইলপত্র এনে দেয়া।
সূত্র জানায়, এ কাজ করতে গিয়ে বছর না ঘুরতেই সুসম্পর্ক হয় র্যাংগস মটরস’র কর্তাদের সঙ্গে। তাদের হাত ধরে কোম্পানির ট্রান্সপোর্ট বিভাগে কাজ নেন। গাড়ি রেজিট্রেশনের ভ্যাটের কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাত করে দুই বছরের মাথায় চাকরী হারান রুবেল।
দুই বছর বেকার জীবন পার করে বিআরটি-এর পাশে শাহারাস্তি বিজনেস সেন্টার নামে দোকান খোলেন রুবেল। বিআরটিএ- তে আসা গ্রাহকদের অনলাইন ব্যাংকিং জমার পাশাপাশি শুরু হয় দালালি। গড়ে তোলেন বিশাল চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, করোনাকালীন সময়ে বিআরটি’র কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হাজার হাজার গ্রাহকের গাড়ির কাগজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্যাক্স টোকেনের টাকা জমা দেয় এই চক্র। কিন্তু বিআরটি’র কোষাগারে মাত্র ৫২ টাকা জমার পরিবর্তে হাজার হাজার টাকা নেন তারা। এভাবে গ্রাহকের গাড়ির ইনকাম ট্রাক্সের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করে চক্রটি। পরবর্তীতে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
এসব চক্রের বিরুদ্ধে বিআরটিএ-তে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটকও হন কেউ কেউ। তবে অধরাই থেকে যান মূল আসামীরা। ফলে, বিআরটিএ-তে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের হয়রানি কমে না। তাদের জিম্ম করে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুসন্ধান জানা যায়, এসব চক্রের সঙ্গে বিআরটিএ-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। তাদের যোগসাজশে একজনের টিন সার্টিফিকেট আরেক জনের নামে দেখিয়ে সরকারের কোটি কেটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।
কয়েক বছরের ব্যবধানে রুবেল কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাজধানীর কাফরুলের ৩৩১/২/৩ বাড়িতে ফ্ল্যাট, মিরপুর শাহআলী প্লাজার তৃতীয় তলায় শাহরাস্তী টেলিকম এন্ড ইলেকট্রনিক্স (টিন নাম্বার-১৭৩৩০২৩৯৬০১৮) দোকান রয়েছে রুবেলের।
জানা যায়, রুবেলের নামে রয়েছে ৭ টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, একটি মাইক্রোবাস। এক নারীর নামেও ৮টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিনেছেন রুবেল। এছাড়াও বেনামে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকা সম্পদ।
ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৯০৭, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৩৮, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৯৩২, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৮২৯, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৬০৩, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-২৮০৮ নম্বরের সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলো রুবেলের। একটি সিএনজির বাজার মূল্য ২৫ লাখ টাকার বেশি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেড় কোটি টাকা দিয়ে এসব কিনেছেন তিনি।
এছাড়া পাইনিয়ের অটোমোবাইল থেকে ৩০ লাখ টাকায় বিনিময়ে (ঢাকা মেট্রো- চ- ১২-৭৫৫২) মাইক্রোবাস কেনেন রুবেল।
২০১৪ সালে তানিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন রুবেল। শ্বশুর কৃষক হলেও মেয়ে জামাইয়ের অবদানে আজ তিনিও কোটি টাকার মালিক।
জানা যায়, রুবেলের স্ত্রীর নামেও রয়েছে ৮ টি সিএনজি। ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪০১, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৪৭, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৪৫, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৫২, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫২৪, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫০৮, ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫০৭ এবং ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫২৫। প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে এসব গাড়িও কিনেছেন গত দুই-তিন বছরের মধ্যে।
বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিন পর পর লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। ফলে ধরা-ছোয়ার বাইরে থেকে যান রুবেলরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিআরটিএ তে দালাল ছাড়া কাজ হয়না। বারবার বিচার দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে হারুন অর রশিদ রুবে ‘র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সূত্র: বাংলা অ্যাফেয়ার্স