বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৭ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১১:২৮, ১৭ আগস্ট ২০২৫

রাশিয়া একটি বড় শক্তি, ইউক্রেনের উচিত সমঝোতায় যাওয়া: ট্রাম্প

রাশিয়া একটি বড় শক্তি, ইউক্রেনের উচিত সমঝোতায় যাওয়া: ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় যাওয়া এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‌ ‘রাশিয়া একটি বড় শক্তি, আর তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আলাস্কায় সাম্প্রতিক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছে আরও ভূখণ্ড দাবি করেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইতোমধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশও রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেছেন, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, স্থায়ী শান্তিচুক্তিই হচ্ছে সমাধান। তার দাবি, ‘যুদ্ধবিরতি বেশিরভাগ সময় টেকে না, তাই একটি স্থায়ী চুক্তিই যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায়।’

অন্যদিকে জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক। তিনি বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না হলে যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয়।’ তবুও তিনি আগামী সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

এ বৈঠক অনেককে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে গত ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে, যখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে পুতিনকে নিয়ে তিন পক্ষের বৈঠকও হতে পারে।

ইউরোপীয় দেশগুলো ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারাও অংশ নিতে পারেন।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন চালাচ্ছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিয়েছে। এতে হাজারো ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকসহ দুই পক্ষের অগণিত মানুষ নিহত হয়েছেন।

ট্রাম্পের মন্তব্য অনেকাংশে মিলে গেছে মস্কোর সরকারি অবস্থানের সঙ্গে। পুতিন সব সময়ই বলে আসছেন, দুই পক্ষের অবস্থান একেবারে বিপরীত হওয়ায় সমাধান জটিল হবে। তিনি আবারও ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা আটকে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মূলত একমত হয়েছেন। তার ভাষায়, ‘আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি। তবে ইউক্রেনকেও রাজি হতে হবে।’

কিন্তু জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া কোনো ভূখণ্ড ছাড়বেন না। দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরকে তিনি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকে অপরিহার্য বলে মনে করছেন তিনি।

এ বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য। অন্যদিকে পুতিনও এই নিশ্চয়তার কথা বলেছেন, যদিও বিদেশি সেনা এতে জড়িত থাকুক তা তিনি চান না।

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসা পুতিনের জন্যও এটি একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। যদিও বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন।

সর্বশেষ