বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২০, ২৪ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১২:৩৮, ২৪ জুলাই ২০২৫

ভারত বেআইনিভাবে বাঙালি মুসলিমদের ফেরত পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে

ভারত বেআইনিভাবে বাঙালি মুসলিমদের ফেরত পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে
ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত সরকার বেআইনিভাবে শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটির মতে, এসব মানুষকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে কোনো ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বুধবার এক প্রতিবেদনে জানায়, বিতাড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা। ২০২৫ সালের মে মাস থেকে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে।

সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, ‘সরকার যেভাবে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ ঠেকানোর দাবি করছে, তা অবিশ্বাস্য, কারণ এতে ন্যূনতম আইনগত অধিকার কিংবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুন মাসে এই ইস্যুতে ৯টি ঘটনার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নেয়। এর মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও রয়েছেন, যারা ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তারা ফের ভারতে ফিরে যান। সংস্থাটি গত ৮ জুলাই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। এই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বিজেপি শাসিত রাজ্য আসাম, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা এবং রাজস্থান থেকে অধিকাংশ দরিদ্র মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের আটক করে বিএসএফের মাধ্যমে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা ধমক, মারধর এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটক ব্যক্তিদের বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু মানুষ পরে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে তারা ভারতীয় নাগরিক এবং ভারত সরকার বাধ্য হয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশ হয়রানি শুরু করে। মে মাসে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আসাম থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ভারত আরও ৪০ রোহিঙ্গাকে সমুদ্রে নামিয়ে দিয়ে তাদের মিয়ানমারের উপকূলে সাঁতরে যেতে বলে। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ ঘটনাটিকে “মানবতার চরম লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক নন-রিফাউলমেন্ট নীতির সরাসরি লঙ্ঘন, যা অনুযায়ী কাউকে এমন স্থানে ফেরত পাঠানো যায় না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ মে ভারত সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, এই ধরনের 'পুশ-ইন' গ্রহণযোগ্য নয়। কেবল সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদেরই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ফেরত নেওয়া হবে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মে মাসে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠেকাতে অস্বীকৃতি জানায়। আদালত জানায়, তারা যদি ভারতের নাগরিক না হন, তবে তাদের ফেরত পাঠানো যেতে পারে। পরে ১৬ মে আদালত রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার বিষয়টিকে সুন্দরভাবে সাজানো গল্প বলে উড়িয়ে দেয়, যদিও সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ভারতের এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, জাতিগত বৈষম্য বিলোপ সনদ এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষা চুক্তির পরিপন্থী। সংস্থাটি মনে করে, কাউকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর অধিকার, আইনজীবীর সহায়তা এবং সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি আটক ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয় এবং নারীদের, শিশুদের, প্রবীণদের ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার ব্যবস্থা রাখা উচিত।

সম্পর্কিত বিষয়: