‘পুরুষদের নয়, আমি পিতৃতন্ত্রকে অপছন্দ করি’, যে কারণে বললেন বাঁধন

জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে রাজনীতির মাঠে সব জায়গায় আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি বরাবরের মতোই খোলামেলা এবং সাহসী আলোচনার জন্য খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি তিনি ‘আমার জীবনের পুরুষরা’ ক্যাপশনে এক স্ট্যাটাসে তার আপত্তি পুরুষদের প্রতি নয়, বরং সমাজে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতি তার স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে অভিনেত্রী লেখেন, আমাকে নিয়ে প্রায়ই এক বড় ভুল বোঝাবুঝি হয়—অনেকে ভাবে আমি নাকি পুরুষদের পছন্দ করি না। এটা সত্যি নয়। আমি যা পছন্দ করি না, তা হলো আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, আর সেই সমাজকে টিকিয়ে রাখা নারী-পুরুষ উভয়কেই ‘

তিনি লেখেন, ‘আমাকে নিয়ে প্রায়ই একটা বড় ভুল বোঝাবুঝি হয়— যে আমি পুরুষ পছন্দ করি না। এটা সত্যি নয়। আমরা যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করি তা আমি পছন্দ করি না, এবং পুরুষ এবং মহিলা উভয় যারা এই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অনেক দিন ধরে, আমি এমনকি তাদের ঘৃণাও করেছি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, আমি বুঝতে পেরেছি— এটা সম্পূর্ণই তাদের দোষ নয়। এটা সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র যা তাদের পিতৃতন্ত্রের বাহক হিসেবে পরিণত করে। সুতরাং আমাকে খুব স্পষ্ট করে বলতে দিন: আমি পিতৃত্ব পছন্দ করি না, বা যারা এটি ধরে রাখে- কিন্তু আমি নিজেদেরকে ঘৃণা করি না।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আমার কিছু মানুষ আছে যারা আমাকে গভীরভাবে আকার দিয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, অবশ্যই, আমার বাবা, যিনি আমাকে অগণিত উপায়ে ছাঁচেছেন। আর একজন সাদ, আমার রেহানা পরিচালক। আমি আজ যে ব্যক্তি আছি তার উপর এই দুইজন মানুষের গভীর প্রভাব ছিল।

ভাইদের সম্পর্কে বাঁধন লেখেন, ‘অতঃপর, আমার দুই ভাই— আমার আজীবন সমর্থন, আমাদের চিন্তার মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। বিশেষ করে আমার ছোট ভাই, রাশা, যে শুধু আমার ভাই নয়, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুও—যার সাথে আমি কথা বলতে পারি একটি শিশুর সরলতার সাথে। এবং আমার অন্য ভাই, যে আমার পাশে থেকেছে যখন আমার বাবা-মা পারেনি। আমি তা কখনো ভুলব না। তারা উভয়ই উত্তরাধিকার সম্পর্কে একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে: তারা কঠোরভাবে শারিয়া আইন অনুসরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু পরিবর্তে আমার সাথে এটি সমানভাবে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না যে তারা আমাকে দিতে হবে, যেন এটা তাদের দিয়ে শুরু করা ছিল—কিন্তু এটাই আমাদের সিস্টেমের বাস্তবতা। এবং তারা ন্যায্যতা এবং ভালোবাসার সঙ্গে এটির জবাব দিয়েছে। আশা করি একদিন আমাদের আইন নিজেই সবার জন্য সমান উত্তরাধিকার নিশ্চিত করবে।’

সর্বশেষ অভিনেত্রী লেখেন, ‘আমার জীবনে আরো কয়েকজন পুরুষ আছে যারা আমাকে অর্থবহ ভাবে প্রভাবিত করেছে। তাদের জন্য, আমি ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই বহন করি না। তারা সবসময় আমার প্রার্থনায় থাকবে। তারপর—এখানে অন্যরা আছে। যারা আমার জীবনে নেতিবাচক, কখনও কখনও নিষ্ঠুর দাগ রেখে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে। তারা ছিল অসম্মানজনক, হিংস্র, অমানবিক। এবং তবুও, অদ্ভুতভাবে, আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। কারণ তারা যতই আমাকে ভাঙতে চেয়েছে, তাদের নিষ্ঠুরতা আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে— অন্যায়ের বিরুদ্ধে অগ্নিকুণ্ডের মত। তারা আজ আমি কে তা আকার দিয়েছে। তারা কখনো আমার প্রার্থনায় থাকবে না—কিন্তু তারা আমার গল্পে বিদ্যমান। এবং হয়তো একদিন, তারা বুঝবে তারা কি করেছিল। সেই উপলব্ধিই হবে তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি।’