গত ১১ মাসে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধে ২২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব

ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ইট দিয়ে আঘাত করে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় দুইজন আসামিকে এবং চট্টগ্রামে স্ত্রীকে কুপিয়ে ১১ টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের বিভিন্ন সাফল্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংস্থাটি।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব ডিজি।
র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তারা হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা, মাদক পাচার, অপহরণ, প্রতারণাসহ চাঞ্চল্যকর অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।
গত ৯ জুলাই রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। নিহতের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। তদন্তে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় এবং অভিযানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে আলমগীর (২৮) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে।
একইদিন, চট্টগ্রামে এক ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ ১১ খণ্ডে বিভক্ত করে বাসার বিভিন্ন স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। র্যাবের তৎপরতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে মো. সুমন (৩৫) নামের ওই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। পারিবারিক কলহ থেকেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
র্যাব মহাপরিচালক জানান, দেশে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু এই দুটি ঘটনা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে র্যাব।
গত ১১ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোমা আতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে র্যাব-১ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মব ভায়োলেন্স রোধেও র্যাব সফল হয়েছে। গত ২ জুলাই লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। আর ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডার মামলায় ছয়জন গ্রেফতার হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় কুমিল্লা ও ভোলায় সাতজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কুমিল্লায় এক নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রধান আসামি শাহ পরানসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীকে মারধর ও স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামিকেও গ্রেফতার করেছে র্যাব।
অপহরণ সংক্রান্ত অভিযানে র্যাব সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণের ঘটনায় পাঁচজন এবং কুমিল্লা থেকে অপহৃত ৭ বছরের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়।
মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাব ১৮০০ বোতল বিদেশি মদ ও দুইজন ব্যবসায়ীকে হবিগঞ্জ থেকে এবং ১৫৪ কেজি গাঁজাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সারা দেশে পরিচালিত অভিযানে ৩৫০০ জনের বেশি মাদক মামলার আসামিকে গ্রেফতার করে ২৭ হাজার কেজি গাঁজা, এক লাখ পাঁচ হাজার বোতল ফেনসিডিল, ৪২ লাখ পিস ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহীতে পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার এবং বিনিয়োগ প্রতারণায় এক নারী ও দুই বিদেশিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করার কথাও জানায় র্যাব।
লক্ষ্মীপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবাকে হত্যার মামলার প্রধান আসামি মামুনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত র্যাবের কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অস্ত্র মামলায় ১৭২ জন আসামি ও ৫০০টির বেশি অস্ত্র, ১০ হাজারের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭ জন জলদস্যু ও বনদস্যু, ৭৩ জন মানবপাচারকারী এবং উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ জন ভিকটিম। অপহরণ মামলায় ৫০০ জনের বেশি আসামিকে গ্রেফতার ও ৭৫০ জন অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভুয়া র্যাব পরিচয়ে অপরাধে জড়িত পাঁচজনকে ধরা হয়েছে।
হত্যা ও ধর্ষণের মামলায় র্যাব গ্রেফতার করেছে ২২০০ জনের বেশি আসামিকে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, প্রতারণা, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি এবং মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায়ও হাজারো অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিপুল পরিমাণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, আইনের শাসন বজায় রাখা, মানবাধিকার রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই র্যাবের মূল লক্ষ্য। র্যাব জনগণের প্রকৃত বন্ধু হয়ে বিশ্বাস অর্জনের জন্য ভবিষ্যতেও দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাবে।