ই–অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক সোহেল রানা এখন আলবেনিয়ার কারাগারে
আলোচিত ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও ঢাকার বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা বর্তমানে আলবেনিয়ার কারাগারে বন্দি আছেন। প্রায় নয় মাস ধরে তিনি সেখানে আটক আছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দক্ষিণ–পূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় তিনি দাবি করেছেন, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বজন, এবং রাজনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দেশে ফেরত পাঠানো হলে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘সোহেল রানা এখন আলবেনিয়ার কারাগারে আছেন। তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতে আমরা আলবেনিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)–কে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছি। তবে তারা এখনো কোনো জবাব দেয়নি।’
ঢাকায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার নয়টি মামলা রয়েছে।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর ই–অরেঞ্জের মাধ্যমে প্রতারণার মামলায় নাম আসার পর সোহেল রানা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান। পরদিন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে বিএসএফের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ হাজার রুপি জরিমানা হয় তাঁর। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি পর্তুগাল হয়ে আলবেনিয়ায় পালান, যেখানে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সোহেল রানার বিরুদ্ধে ২০২২ সাল থেকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। আলবেনিয়ায় গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। মামলায় তিনি দাবি করেন, গত বছরের জুলাইয়ের ‘গণ–অভ্যুত্থান’ সংক্রান্ত একটি হত্যা মামলায় তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে, এবং দেশে ফেরত গেলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
তবে বাংলাদেশ পুলিশ আলবেনীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, এমন কোনো হত্যা মামলা দেশে হয়নি এবং সোহেল রানা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই দেশ ছাড়েন।
২০২০ সালের দিকে দ্রুত বেড়ে ওঠা ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–অরেঞ্জের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সোহেল রানা। তাঁর স্ত্রী নাজনীন নাহার, বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও ভগ্নিপতি মাশুকুর রহমানের সঙ্গে মিলে তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডির তদন্তে এখন পর্যন্ত সোহেল রানার ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সিআইডির মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘মানি লন্ডারিং মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি। এ জন্য আমরা পুনরায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছি।’ এদিকে ই–অরেঞ্জ মামলায় গ্রেপ্তার সোহেল রানার বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও তাঁর স্বামী সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, আর স্ত্রী নাজনীন নাহার এখনো পলাতক।



























