ফরিদপুরের বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আর আশপাশের ১০ থেকে ১২টি দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা সদরের ওয়াবদা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনাজুর রহমান লিপন, লিয়াকত মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, টিটু, জব্বার, ইমদাদুল হক, লাভলুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে দিবসটি উপলক্ষে দুই পক্ষ পৃথক সমাবেশ ও র্যালির আয়োজন করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াবদা মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি নেয় ঝুনু গ্রুপ, আর চৌরাস্তা এলাকায় পৃথক কর্মসূচি করে নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা। বিকেলে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা বাজার এলাকায় অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওয়াবদা এলাকায় ঝুনু গ্রুপের অফিসে হামলা চালায়। এতে অফিসসহ আশপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০টি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ ধ্বংসযজ্ঞ চলে।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলে বিক্ষুব্ধদের বাধার মুখে পড়ে ফিরে যান। পরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগ করে বলেন, “নাসির গ্রুপের সমর্থকেরা বহিরাগত লোক এনে অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়, অফিসে আগুন দেয় এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।”
অন্যদিকে নবগঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ঝুনু মিয়ার সমর্থকেরা উসকানি দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়াটে লোক এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।”
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, আহত অবস্থায় সাতজনকে হাসপাতালে আনা হয়, এর মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এখনো কোনো পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে, তা ধারণা করা যায়নি।”



























