বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ কার্তিক ১৪৩২

শীর্ষ সংবাদ:

‘একবিংশ শতাব্দীতে হাসিনার মতো বড় খুনি কেউ নেই’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ পরিবার নাও থাকতে পারে, রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে হাসিনা
ইমাম-খতিব হচ্ছেন সমাজের জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান মানুষ : এ্যানি
দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প! পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
ট্রলারাসহ ৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
জ্যামাইকা লন্ডভন্ড করে কিউবার দিকে হারিকেন মেলিসা
নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: মির্জা ফখরুল
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যমুনায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
এনসিপির নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের জোটের সংবাদটি শতভাগ মিথ্যা: রাশেদ খাঁন
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩৭

‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

‎তালাবদ্ধ কুড়িগ্রামের ভোক্তা অধিদপ্তর অফিস, নেই কর্মকর্তা!

‎তালাবদ্ধ কুড়িগ্রামের ভোক্তা অধিদপ্তর অফিস, নেই কর্মকর্তা!
ছবি: সদ্য সংবাদ

‎‎কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা অফিসের সামনে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দুই মধ্যবয়সী মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। তারা ৫০ কিলোমিটার দূরের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে এসেছেন অভিযোগ জানাতে। কিন্তু সামনে ঝুলছে বড় তালা, ভেতরে কেউ নেই। কোনো নম্বরেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না কারণ জাতীয় তথ্য বাতায়নে দপ্তরটির কোনো সরকারি ফোন নম্বর নেই, অফিসের সামনে ঝুলানো চার্টের নম্বরটিও বন্ধ।

‎সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের পর দিন তালাবদ্ধ পড়ে আছে কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়। দপ্তরে একজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও নিয়মিত উপস্থিতির কোনো চিহ্ন নেই। ধুলো জমে গেছে দরজায়-জানালায়, চারপাশে মাকড়সার জাল যেন পরিত্যক্ত অফিস! ফলে অভিযোগ জানাতে এসে সাধারণ মানুষকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে।‎

‎গত এক মাসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট দপ্তরের কার্যক্রম কার্যত অচল। সর্বশেষ রোববার ও সোমবার (২৬ ও ২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টার পর অফিসে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র তালাবদ্ধ দরজা।‎‎

রমজান মাসে কুড়িগ্রামে ভোক্তা অধিকারের কিছু অভিযান দেখা গেলেও এরপর থেকে আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্মকর্তার অনুপস্থিতি ও উদাসীনতায় জেলার ভোক্তাসেবা সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়েছে। তবে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শেখ সাদী দাবি, এ মাসে কুড়িগ্রাম জেলায় মোট ৮টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।‎

‎ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট এলাকার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একটি দোকান থেকে কিছু মালামাল কিনেছিলাম, বাড়ি গিয়ে দেখি ওজনে কম। দোকানিকে বলায় উল্টো খারাপ আচরণ করেছে। তাই ডিসি অফিসে এসে অভিযোগ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অফিসে তালা। কেউ নেই, ফোন নম্বরও বন্ধ। এখন নিরুপায় হয়ে ফিরে যাচ্ছি সারাদিনের সময়টাই নষ্ট হলো।’‎

একই অভিজ্ঞতা জানালেন উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক জরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় যত্রতত্র মানহীন খাবারের দোকান গড়ে উঠছে। কোনো মূল্যতালিকা নেই, যারা ইচ্ছেমতো দাম নেয়। অভিযোগ দিতে এসে দেখি অফিস বন্ধ!’

‎‎ভোক্তা অফিসসংলগ্ন আরেক সরকারি দপ্তরের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অফিসে একজন কর্মচারী ছিলেন, তিনি বদলি হয়েছেন। এখন শুধু কর্মকর্তা আছেন, তিনিও লালমনিরহাটে থাকেন। রমজানের পর থেকে চার-পাঁচবারের বেশি অফিস খোলেননি। বেশিরভাগ সময়ই তালা ঝুলতে দেখা যায়।’

‎জেলা বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কুড়িগ্রামের বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর থাকলেও অফিসটি সবসময় বন্ধ থাকে, কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায় না।’

‎যোগাযোগ করা হলে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শেখ সাদী বলেন, ‘আমি লালমনিরহাট জেলার দায়িত্বে আছি, কুড়িগ্রাম জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এখন আমার অধীনে কোনো কর্মচারী নেই, একজন ছিল, সে ফেব্রুয়ারিতে বদলি হয়েছে।’

‎তিনি আরও বলেন, ‘আমি অফিসে না বসলেও মাঠে দায়িত্ব পালন করি। এ মাসেই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আটটি অভিযান পরিচালনা করেছি।’ অভিযানের জরিমানা বা শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস শেষে আবেদন দিলে এসব তথ্য পাওয়া যাবে।’

‎‎কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, “বিষয়টি আগে জানা ছিল না। এখন অবগত হয়েছি। ভোক্তা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে অফিসে বসার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

‎জেলার জনসাধারণের অভিযোগ- অফিস তালাবদ্ধ থাকায় তারা কোনো অভিযোগ জানাতে পারছেন না, বাজারে চলছে ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র আধিপত্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্য জেলায় অবস্থান করায় কুড়িগ্রামে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কাজ। ফলে ভোক্তা সুরক্ষার এই সরকারি দপ্তরটি এখন পরিণত হয়েছে তালাবদ্ধ এক ভবনে, যার দরজা খুলছে না অভিযোগের আশায় আসা মানুষের মনে জমছে ক্ষোভ আর হতাশা।

আতিকুর রহমান/এমটি

সর্বশেষ