বন্যায় ভাসছে ফেনী আশ্রয়ে সাত হাজার, উদ্বেগ প্রকাশ নাগরিক সংগঠনের

ফেনীতে আবারও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা বর্ষণের ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং জেলার ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে অন্তত ৭ হাজার মানুষ। এক বছর আগের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই নতুন করে প্লাবনে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।
বুধবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক অবহেলাকে দায়ী করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যা স্বাভাবিক বর্ষার ফল নয় বরং বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ এবং অব্যবস্থাপনার পরিণতি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সল, উসাফের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম নুরুল আবসার, ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন রাসেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক মোশাররফ হোসাইনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পরও পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বল্লামুখা বাঁধ মেরামত করেনি। যার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকা ভারতের পানি প্রবাহে ডুবে গেছে। এবারের প্লাবনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা।
এ সময় তাঁরা সাতটি দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ, শহরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও দুর্নীতি তদন্ত, এবং নগর উন্নয়নের নামে অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার আংশিক অংশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮২৬ জন। পরশুরাম ও ফুলগাজীতে স্বেচ্ছাসেবক দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ছাগলনাইয়া, মাটিয়াগোধা, দক্ষিণ সতর, কাশিপুরসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও ভাঙন দিয়ে ঢোকা পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলার ছয় উপজেলায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার পরিস্থিতি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।