বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ৯ আগস্ট ২০২৫

চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে কি প্রভাব ফেলে? যা বলছে গবেষণা

চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে কি প্রভাব ফেলে? যা বলছে গবেষণা
ছবি: ইন্টারনেট

মানুষ বহুদিন ধরে বিভিন্ন কাজের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার অনান্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। একসময় গুগল ছিল পড়াশোনার অন্যতম টুলস,কিন্তু সেই যায়গা দখল করে নিয়েছে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা এই প্রযুক্তি। যা পড়াশোনাকে আরও সহজ করে তুলেছে। এমআইটির এক গবেষণার তথ্য বলছে, চ্যাটজিপিটির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের সূক্ষ্ম চিন্তা দক্ষতা ও স্মরণশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ওয়েলেসলি কলেজ এবং ম্যাসাচুসেটস কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনের গবেষকদের দ্বারা চার মাসব্যাপী পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ওপেনএআই-এর তৈরি বড় ভাষা মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করার কারণে ব্যবহারকারীদের স্নায়বিক,ভাষাগত এবং আচরণগত দিকে থেকে ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। 

গবেষণায় উঠে এসেছে,  ফলাফলে দেখা যায়, এলএলএম ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ হ্রাস পায়। লেখার ওপর তাদের মালিকানাবোধ কমে যায়। তারা নিজেদের লেখা বিষয়বস্তু মনে রাখতে ব্যর্থ হন। এমনকি এলএলএম ব্যবহার বন্ধ থাকার পরেও এসব প্রভাব থেকে যায়।

যদিও অনেক ব্যবহারকারীর জন্য এ ফলাফল আশ্চর্যজনক নয়, কারণ চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের উদ্দেশ্যই চিন্তার পরিশ্রম কমানো। তবু এমআইটি’র এই গবেষণা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেছে, এসব প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা স্মৃতি ও শেখার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। 

টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান গবেষক নাটালিয়া কসমিনা বলেন, ‘আমি জানি, আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কেউ একজন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ‘চলুন জিপিটি কিন্ডারগার্টেন চালু করি’। এটা হবে ভয়ানক ও ক্ষতিকর।’ উল্লেখ্য, এ বছরের এপ্রিলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেজি-টু-১২ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এআই-সাক্ষরতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যা এই গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫৪ জনকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। একদল চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে (এলএলএম গ্রুপ), একদল গুগল সার্চ (সার্চ ইঞ্জিন গ্রুপ), এবং তৃতীয় দল কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই শুধুমাত্র নিজেদের চিন্তা ব্যবহার করে রচনা লেখেন (শুধু মস্তিষ্ক)। পরবর্তী ধাপে এলএলএম গ্রুপকে চ্যাটজিপিটি ছাড়াই রচনা লিখতে বলা হয় এবং ‘শুধু মস্তিষ্ক’ দলকে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়।

গবেষকরা রচনার সময় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম ইইজি পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করেন।  লেখা অনুচ্ছেদগুলো এনএলপি বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানব মূল্যায়কের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। গবেষণায় দেখা যায়, এলএলএম গ্রুপের ‘আলফা ব্যান্ড কানেক্টিভিটি’ যা মস্তিষ্কের স্মৃতি ও ভাষা প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতার নির্দেশক অন্যান্য দলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

যখন অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিতে বলা হয়, তখন এলএলএম গ্রুপের ৮৩ শতাংশই ব্যর্থ হন। কেউই নির্ভুলভাবে উদ্ধৃতি দিতে পারেননি। এমনকি যারা পরে চ্যাটজিপিটি ছাড়াই লিখেছিলেন, তাঁরাও আগের রচনার কিছুই মনে রাখতে পারেননি। গবেষকেরা বলেন, ‘এই দলের দুর্বল স্মৃতি এবং ভুল উদ্ধৃতি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের রচনাগুলোর সঙ্গে কোনো মানসিক সংযোগ তৈরি হয়নি, বরং সেগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।’ তৃতীয় সেশনে দেখা যায়, এলএলএম গ্রুপের অধিকাংশ রচনাই চ্যাটজিপিটি থেকে কপি-পেস্ট করা। তবে অল্প কিছু শিক্ষার্থী সামান্য সম্পাদনা করেছে।
 

সর্বশেষ