বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

|২১ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০১, ১৫ জুলাই ২০২৫

ছাত্রদল-শিবিরের দ্বন্দ্বে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ

ছাত্রদল-শিবিরের দ্বন্দ্বে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার প্রকাশ্য বিরোধ প্রতিফলিত হচ্ছে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরেও। এক সময় একসঙ্গে আন্দোলন করলেও এখন ছাত্র শিবিরকে ‘গুপ্ত সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে ছাত্রদল। খবর! বিবিসি বাংলা।

ছাত্রদলের নেতারা অভিযোগ করছেন, শিবির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, ৫ আগস্টের পর থেকেই শিবির পরিকল্পিতভাবে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে।

এদিকে শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা পাল্টা অভিযোগ এনে বলছেন, ছাত্রদল ও বিএনপি রাজনৈতিক এজেন্ডা না থাকায় এখন শিবিরকে টার্গেট করে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ছাত্রদল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিবিরের বিরুদ্ধে বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

এ নিয়ে সংগঠন দুটির সাবেক নেতারাও পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করেছেন। অতীতে শেখ হাসিনার সরকারের বিরোধিতায় একসাথে আন্দোলন করলেও এখন ছাত্র রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ, ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার ও রাজনীতির অর্থায়ন ঘিরে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কার ভূমিকা বেশি ছিল এই বিতর্কে দুই সংগঠনের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং গোপন রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, ঢাবির সংবাদ সম্মেলনের ভাইরাল ভিডিও, এবং রাজনৈতিক স্লোগান ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

ছাত্রদল দাবি করেছে, শিবির বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে গুপ্ত রাজনীতি চালাচ্ছে এবং সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করছে না। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত হলেও সেখানকার এক শিক্ষার্থী বর্তমানে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, যা প্রমাণ করে তারা কীভাবে গোপনে সংগঠন চালায়।

জবাবে শিবির সভাপতি বলেন, তাদের যে সকল ক্যাম্পাসে সংগঠন আছে, সেখানে কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রদলের অভিযোগ হাস্যকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্কেও রয়েছে উত্থান-পতনের ইতিহাস। ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এই দুই দল। ২০০১ সালে সেই জোট সরকার গঠন করে। কিন্তু ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জামায়াতের নীরবতা ও পরবর্তী সময়ে কর্মসূচিতে দূরত্ব বজায় রাখার কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরে।

বিএনপি মহাসচিব নিজেও একাধিকবার বলেছেন, ২০১৫ সালের পর থেকেই কর্মসূচির ক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ছাত্রদল ও শিবিরও সেই রাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করে বিভাজিত হয়েছে।

২০০১ সালে 'সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য'-তে ছাত্রদল ও শিবির একসঙ্গে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ গঠনের সময় ডানপন্থি বা ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোকে বাদ রাখা হয়।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কখনো নির্বাচনি, কখনো রাজনৈতিক হলেও বর্তমানে তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ থেকে সরে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, শিবির এখন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

অন্যদিকে ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, সাম্প্রতিক বিরোধ রাজনীতিরই অংশ। তিনি বলেন, শিবির একটি পরিচিত ছাত্র সংগঠন, এখানে গোপন করার কিছু নেই।