বিটিসিএল প্রকল্পে দুদক চিঠি: মুখ খুললেন ফয়েজ তৈয়্যব

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বিতর্কিত প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দুদকের তদন্ত বন্ধের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আন্তরিক সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, চিঠির বিষয়বস্তু বিকৃত করে ডিও লেটারকে তদন্ত বন্ধের চেষ্টার উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সত্য নয়। তিনি দাবি করেন, বিটিসিএলের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২৯০ কোটি টাকার একটি এলসি খোলা হয়। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী বিটিসিএলকে বাজার থেকে সরাতে মরিয়া।
ফয়েজ আহমদ বলেন, তারা টেলিযোগাযোগ খাতের সংস্কারে এগিয়ে যাওয়ায়, দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিতে জড়িত স্বার্থান্বেষী মহলের আক্রোশের শিকার হচ্ছেন। তার ভাষায়, ‘আমরা পরিবর্তন আনছি, যারা এত দিন অনিয়ম-দুর্নীতি করে লাভবান হয়েছে, তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা ক্ষুব্ধ।’
তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নতুন প্রজন্মের আন্তর্জাতিকমানের টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও জিএসএমএ-র নির্দেশনা অনুসরণ করছে।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে চালু হওয়া আন্তর্জাতিক লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতি মোবাইল অপারেটরদের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছিল। একে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একের পর এক লাইসেন্স পেয়ে লাভবান হয়েছে, যারা এখনো সক্রিয়।
বর্তমান সরকার ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ তৈরি করছে, যার খসড়ায় উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে। ফয়েজ আহমদ জানান, এতে এসএমই উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, আইএসপি সেবা প্রদানকারীদের নিয়ন্ত্রণহীন (ডিরেগুলেটেড) করে ‘লাইট টাচ লাইসেন্সিং’ কাঠামোতে আনা, এবং অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও স্তর বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আইসিএক্স ও নিক্স নামে কিছু লাইসেন্স বিশ্বে বিরল। সামান্য অবকাঠামো গড়ে এই খাত থেকে শত কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এজন্য এসব অকার্যকর স্তর বাতিল করে আধুনিক ও কার্যকর লাইসেন্স কাঠামো গড়ার কাজ চলছে।
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, গ্রাহকের প্রতি কলে বাড়তি ৫ পয়সা খরচ আইসিএক্স স্তর থাকার কারণে যুক্ত হয়। তাই এমএনওরা এই স্তর তুলে দেওয়ার পক্ষে, যাতে গ্রাহকের জন্য কলরেট কমানো সম্ভব হয়।
শেষে তিনি অভিযোগ করেন, আইটিইউ ও জিএসএমএ ২০১৫ সাল থেকেই বাংলাদেশে সহজ ও কার্যকর লাইসেন্সিং কাঠামো চাচ্ছে, কিন্তু তৎকালীন সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ফয়েজের দাবি, ‘আমরা সংস্কারের মানসিকতা নিয়ে এগোচ্ছি, কিন্তু বিগত সরকারের মদদপুষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগে বাধা দিচ্ছে।’