মায়ের শরীরে রোগ নবজাতকের দেহে আসবে না কোন পদ্ধতিতে?

একটি শিশু জন্মের সময় তার মা-বাবার কাছ থেকে কিছু শারীরিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। এসবের মধ্যেই অনেক সময় থেকে যায় জিনবাহিত রোগ, যা ভবিষ্যতে সন্তানের দেহে বাসা বাঁধে। কিছু কিছু জটিল রোগ আজীবন চিকিৎসা করেও সারে না।
এই সমস্যার সমাধানে প্রথমবারের মতো সফল হলো বিজ্ঞান। ‘থ্রি প্যারেন্ট ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ নামের এক বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে জন্ম হয়েছে এমন আটটি শিশু, যাদের ডিএনএ-তে নেই কোনো জিনবাহিত রোগের ছাপ— এমনকি তাদের মা’দের শরীরে জটিল বা মারণ রোগ থাকলেও।
উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে ২২ জন রোগগ্রস্ত নারীর ওপর চালানো এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় এই সাফল্য এসেছে। গবেষকরা জানায়, ২২ জনের মধ্যে ৭ জন নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে চারটি কন্যা, চারটি পুত্র এবং একটি যমজ সন্তান রয়েছে। সবার ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, মায়ের জিনগত রোগ কোনোভাবেই সন্তানের শরীরে আসেনি।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে থ্রি প্যারেন্ট আইভিএফ পদ্ধতি।
কীভাবে কাজ করে থ্রি প্যারেন্ট আইভিএফ?
এই পদ্ধতিতে ‘তিনজন’ অভিভাবকের ভূমিকা থাকে একজন পিতা এবং দুজন মাতা।
প্রথম মা: হলেন, যিনি গর্ভধারণ করেন এবং যার ডিম্বাণুতে থাকে ভ্রুণ। কিন্তু তার মাইটোকন্ড্রিয়ায় (কোষের শক্তিকেন্দ্র) জিনগত রোগ থাকার আশঙ্কা থাকে।
দ্বিতীয় মা: হন একজন স্বাস্থ্যবান ডোনার, যিনি সুস্থ ডিম্বাণু দান করেন। বিজ্ঞানীরা প্রথম মায়ের ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস (যেখানে গঠনগত ডিএনএ থাকে) বের করে সেটি দ্বিতীয় মায়ের ডিম্বাণুতে স্থাপন করেন, যার নিজস্ব নিউক্লিয়াস আগে থেকেই সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফলে ভ্রুণে থাকে প্রথম মায়ের নিউক্লিয়াস ডিএনএ, বাবার শুক্রাণু থেকে আসা ডিএনএ এবং দ্বিতীয় মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ। কিন্তু রোগের ঝুঁকি থাকে না, কারণ দ্বিতীয় মায়ের ডিম্বাণুতে থাকে সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া।
ব্রিটেনেই প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে সফলভাবে জন্ম নিয়েছে ওই আট শিশু। এই পদ্ধতির প্রয়োগ ও ফলাফলকে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করছেন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে।
নিউ ইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেম সেল বিজ্ঞানী ডায়েট্রিস এগলিও বলেছেন, ‘মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে জিনবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়া যে বড় চ্যালেঞ্জ, এই পদ্ধতি নিঃসন্দেহে সেই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান দিল।’ সূত্র: আনন্দ বাজার পত্রিকা